পাঠাওচালক হত্যাকারী নজরদারিতে, যে কোনো সময় গ্রেফতার
৩১ আগস্ট ২০১৯ ১৯:১৯
ঢাকা: রাজধানীর মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপরে পাঠাওচালক মো. মিলন মিয়া হত্যায় জড়িত ব্যক্তি নজরদারিতে রয়েছেন। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জানিয়েছেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে মিলনকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান পাঠাও আরোহী।
শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পাঠাও চালক হত্যাকারী সেই আরোহীর সন্ধান মিলেছে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পাঠাও চালককে মূলত একজন ছুরিকাঘাত করলেও এর পেছনে আরও কয়েকজন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকেও ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে হত্যাকারীকে শনাক্ত করা গেছে।’
এদিকে ডিএমপির সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার রাশেদ হাসান শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকারীকে খুঁজে পেতে নানা ধরনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কল রেকর্ড, বিআরটিএ এর গাড়ির নিবন্ধন নম্বর, সিসিটিভি ফুটেজসহ সব কিছু আমলে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী কমিশনার রাশেদ হাসান বলেন, ‘অ্যাপস ব্যবহার করলে হত্যাকারীকে ওইদিনই গ্রেফতার করা সম্ভব হতো। অ্যাপস ব্যবহার না করার কারণেই সময় লাগছে। তবে আমরা আশাবাদী হত্যাকারী যেই হোক তাকে আমরা খুঁজে বের করবই।’
পুলিশের একটি সূত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকারী সামনে থেকে একজন মনে হলেও এর পেছনে আরও কয়েকজন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। মূলত তাদের মাধ্যমেই মূল হত্যাকারীকে শনাক্ত করা গেছে।’
পুলিশের ওই সূত্রটি সারাবাংলাকে জানান, পাঠাও চালক মিলনকে ছুরিকাঘাত করার পর মোটরসাইকেল (ডায়াং ১৫০ সিসি) ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়, প্রযুক্তিগত সহায়তায় তার অবস্থান চিহ্নিত করেছে পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঘটনার পর ওই মোবাইল ফোনটি একবার ঢাকার বাইরে কোনো এক জায়গায় চালু করা হয়েছিল। এছাড়া গাড়ির নম্বরও ডিজিটাল থাকায় কোথায় অবস্থান করছে সেটিও জানতে পেরেছে পুলিশ। মোবাইল ফোনের অবস্থান জানার পরই তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যার মূল রহস্য মোটামুটি বুঝতে পারেন এবং অভিযান শুরু করেন।
ঢাকা মহানগর গোযেন্দা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পাঠাওচালক যাকে যাত্রী হিসেবে তুলেছিলেন, তিনি অ্যাপসের মাধ্যমে নাকি চুক্তিতে নিয়েছিলেন তা জানার চেষ্টার পাশাপাশি যাত্রী তার নিকটাত্মীয় কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে। খুব সহসাই এ ঘটনার রহস্য বের হবে বলে আশা করছি।
এদিকে শাহজাহানপুর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন (২৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টা ১২ মিনিটে তার বন্ধুর (রানা) সঙ্গে কথা হয়। তখন তার লোকেশন ছিল পুরান ঢাকার রায় সাহেববাজার মোড়ে। মিলন তার বন্ধুকে ফোনে জানায়, মালিবাগের একটি ভাড়া পেয়েছে নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসবেন। এমনকি সদরঘাট এলাকায় তার বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা ছিল। ফোন লোকেশন অনুযায়ী পুলিশ জানায়, রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে মোটরসাইকেল গুলিস্তান-পল্টন-মালিবাগ না গিয়ে মানিকনগর-খিলগাঁও-মালিবাগ চৌধুরী পাড়া হয়ে কেন ফ্লাইওভারে উঠলেন তা নিয়ে ঘোরপাক খাচ্ছে পুলিশ। এরপর মৌচাক-মালিবাগের মাঝখানে তিন তলা ফ্লাইওভারের বাকটাতে ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশের ধারণা, পাঠাও আরোহী হয় কৌশলে মানিকনগর-খিলগাঁও-মালিবাগ চৌধুরী পাড়া হয়ে ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য করেছেন নতুবা আরোহী মিলনের বন্ধুদের কেউ ছিলেন যা দুজন মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শাহজাহানপুর থানার ভেতরে উপস্থিত নিহত মিলনের বন্ধু রানা বলেন, সে অ্যাপস ব্যবহার করেনি। রায় সাহেব বাজার থেকে মালিবাগ পর্যন্ত ১০০ টাকার ভাড়া পেয়ে তা চুক্তিতে গিয়েছিলেন বলে ফোনে কথা বলার সময় জানিয়েছে মিলন।
প্রসঙ্গত গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে পাঠাওচালক মিলনকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে আরোহী। পরে গলা জখম অবস্থায় মিলনকে উদ্ধার করে পল্টন থানা পুলিশের এসআই মোজাম্মেল হক ঢামেক হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর ৪টার দিকে মারা যায় মিলন।
এ ঘটনায় মিলনের স্ত্রী শিল্পী বেগম শাহজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। দুই ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মিলন মিরপুর গুদারাঘাট এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতেই ওই রাতে মিলন মোটরসাইকেল নিয়ে পাঠাও চালানোর জন্য বের হয়েছিলেন। এর পাশাপাশি মিলন দিনের বেলায় উবারে প্রাইভেটকার চালাতেন।
আরও পড়ুন
পাঠাওচালককে হত্যা; সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে মাঠে গোয়েন্দারা
মিলনের দুই চোখে সেদিন ছিল বাঁচার আকুতি