Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাকশাল গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন’


৩১ আগস্ট ২০১৯ ২৩:০৩

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি প্রধান। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করে। এই কৃষকের শ্রমের মধ্য দিয়েই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। বাকশাল গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নছা মুজিব স্মরণে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে ছাত্রলীগ এ সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীকে সত্যিকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেকে তৈরি করার জন্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারোর রোজনামচাসহ সিক্রেটস অব ডকুমেন্টস’ প্রকাশিত বইগুলো পড়ার আহ্বান। এছাড়াও ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের অভিজ্ঞতা নিয়েও একটি বই ছাপাতে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত ধরে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের ইতিহাসের সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িত রয়েছে। প্রতিটি সংগ্রামে যে মানুষগুলো আত্মত্যাগ করেছে, আমরা যদি সেই তালিকা বের করি, সেখানেও দেখব ছাত্রলীগের অগণিত নেতাকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাথে কত সাথী একসাথে মিছিল করেছি, দিনের পর দিন মিটিং করেছি। কতজন জীবন দিয়ে গেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে। আবার স্বাধীনতার পর তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে আদর্শচ্যুতও হয়েছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য। আদর্শ বা নীতি না থাকলে কখনও নেতা হওয়া যায় না। ’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দুভার্গ্য আমাদের, জাতির জনকের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। ৭৫-এ তাকে হত্যা করা হলো। এই হত্যাকাণ্ড কেন? কারণ একটাই- তিনি এদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে যান। এই স্বাধীনতা অর্জনের পরে মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন- সেটাও একটা বিরল ইতিহাস।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বিশ্বে বাংলাদেশ একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করত। বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে উঠতে পারত এবং সোনার বাংলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ অনেকেই বাকশাল, বাকশাল বলে গালি দেয়। এই বাকশালটা কি ছিল? এটা ছিল বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ। এই বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি প্রধান। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করে। এই কৃষকের শ্রমের মধ্য দিয়েই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। বাকশাল গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন।’

বাকশাল গঠনের বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি এটি বাস্তবায়ন করে যেতেন তাহলে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হত। যখন তিনি এই কর্মসূচি দিলেন- তখনই এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হলো। এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।

আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার কথা তুলে বলেন, ‘আমি বড় সন্তান হিসাবে জানতাম- বাবা এই দেশটাকে নিয়ে কি ভাবে। কিভাবে তিনি গড়তে চান। কিভাবে দেশের উন্নতি করতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। তিনি সব সমময় সে কথাই বলতেন। কাজেই সেই লক্ষ্যগুলো সামনে নিয়ে আমার পথচলা শুরু। আমার একটা জেদ ছিল, যে করেই হোক এই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা যেন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে। যে বাঙালি অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে পারে, সে বাঙালি দেশকেও গড়তে জানে, গড়তে পারে।’

‘আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি প্রবাসীরাও বলেন, একসময় বাংলাদেশের নাম শুনলেই আমাদেরকে অনেক কথা শুনতে হত। আর আজ বাংলাদেশ নিয়ে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। যখন বলে, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বলতে গেলে বাংলাদেশ এক নম্বর অবস্থানে চলে এসেছে।’- বলেন শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ সংগ্রামের পথে ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই শোককে বুকে নিয়ে, সব ব্যাথা-বেদনা বুকে চেপে রেখেও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে আমরা কাজ করছি। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কোন চাওয়া-পাওয়া রাখিনি। একটাই চিন্তা, মানুষকে কি দিতে পারলাম। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। যে জাতির জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, কষ্ট করে গেছেন। তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি। ’

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার মা কিন্তু ওদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায়নি। তাদের কাছে কোন আকুতি-মিনতি করেনি। বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে। সেই কথাটা সকলকে মনে রাখতে হবে। আমি সবাইকে এটুকুই বলব, তাঁর আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। ’

টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতাকে দাফন করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি শুধু এদেশের মানুষের জন্য তার সারাটা জীবন দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত বুকের রক্ত দিয়ে গেছেন। বুকের রক্ত দিয়েছেন আমার মা। এই দেশকে আমি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা ত্যাগ করেছেন এদেশের মানুষের কল্যাণে, সেই মানুষের কল্যাণে কতটুকু আমরা কাজ করতে পারলাম? সেই হিসাটাই আামদের করতে হবে।

তিনি আরও বলেন ‘আমিও ছাত্রলীগের একজন কর্মীই ছিলাম। সেখান থেকেই আমার যাত্রা। কাজেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এটুকুই বলব, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে নীতি-আদর্শ মেনে নিজেকে গড়ে তুলবে। দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যাবে, যেন জাতির পিতার আত্মা শান্তি পায়।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জোবায়ের আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, উত্তরের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়। সভা পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জানতে হলে তাকে নিয়ে পড়তে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বাকশাল শোকদিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর