১৭ গার্মেন্টে সাড়ে ৩ কোটি টাকার অনিয়ম
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:০০
ঢাকা: ঢাকা ও গাজীপুরের ১৭ গার্মেন্টস বিভিন্ন সুবিধার অপব্যবহার করে সাড়ে ৩ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে। এই অনিয়ম শনাক্ত করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকাও আদায় করেছে ঢাকা কাস্টমস অ্যান্ড ব্ন্ড কমিশনারেট। এছাড়া অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিজিএমইএর মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে চিঠি দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড কমিশনারেট।
কাস্টমসের অনুসন্ধানে জানা যায়—বন্ড সুবিধার আওতায় পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত আমদানি, প্রাপ্যতাহীন আমদানি, ঘোষণার অতিরিক্ত আমদানি ও এক পণ্য ঘোষণায় দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি এবং রফতানির আড়ালে এই অনিয়ম করা হয়।
অনিয়মকারী ১৭ গার্মেন্টস হলো— ঢাকার নিপা নিটওয়্যারস, সাভারের মেসার্স রেজা ফ্যাশন, গাজীপুরের ট্রাউজার ওয়ার্ল্ড, বটম গ্যালারি, মোহাম্মদপুরের সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, ক্যান্টনমেন্টের সিনটেক্স টেক্সটাইল এস অ্যাপারেলস লিমিটেড, গাজীপুরের কাশিমপুরের ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, মিরপুরের মেসার্স কার্ডিয়াল ডিজাইন, আল ইসলাম টেক্স লিমিটেড, করতোয়া অ্যাপারেলস, কায়সার সানকো জেবিটেক্স, টিএনজেড অ্যাপারেলস, এপেক্স ল্যানজারিং, জেনেসিস ফ্যাশন্স, ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড।
আর এই ১৭টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উদঘাটন করে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৬ টাকা ১৮ পয়সা শুল্ককর আদায় করে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি বিজিএমইএ এর কাছে অনুরোধ করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, সরকার ব্যবসায়ের উন্নয়নের জন্য শতভাগ রফতানিকারকদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে। বন্ডেড সুবিধার কোনো পণ্য বাইরে বিক্রি করতে হলে সরকারের প্রযোজ্য শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এ সুবিধার অপব্যবহার করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় নড়েচড়ে বসে বন্ড কমিশনারেটগুলো। যার ধারাবাহিকতায় কমিশনারেটগুলো চালাতে থাকে অভিযান। আর সেসব অভিযানে বন্ডের অপব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর গোমর বেরিয়ে আসে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অন্তভুক্ত বিজিএমইএ এর ১৭টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছিল। যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম উৎঘাটন করে মামলা করে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ১২টি প্রিভেনটিভ টিম বন্ড অনিয়ম রোধে কাজ করছে। আর এনবিআর বলছে, গার্মেন্টেস প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কোনো অনিয়ম করে তখন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এনবিআরকে নানা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অনিয়ম করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না বিজিএমইএকে। তাই এবার এনবিআরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে বিজিএমইএকে অনুরোধ করতে চিঠি দিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অধিকতর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজিএমইকে বলার জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। এখন এনবিআর কী করবে তা এনবিআরের বিষয়।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুবানা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনিয়ম করা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে আমরা এখনও কোনো চিঠি পাইনি। আমরা যে সংবাদ পেয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করে বন্ড কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ৪ সেপ্টেম্বর আমরা একটি সভা নির্ধারণ করেছি। আমরা একের পর এক তালিকায় যেতে চাই এবং এরপর পরীক্ষা করতে হয়।’
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘এলোমেলো অভিযোগ ন্যায়সঙ্গত নয়। সুতরাং আমি এনবিআরকে অনুরোধ করব বন্ডের অনিয়ম করা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে আমাদের অবগত করতে।’
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কমিশনারেটের চিঠি পেয়েছি। বিজিএমইএকে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি চিঠি দেওয়ার জন্য বলেছি। সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে ব্যবসায়ের উন্নয়নের জন্য। যারা এটির অপব্যবহার করছে তাদের শাস্তি পেতে হবে। এখানে আমরা কোনো ছাড় দেব না।’
সারাবাংলা/এসজে/একে/টিএস
আল ইসলাম টেক্স লিমিটেড এনবিআর এপেক্স ল্যানজারিং করতোয়া অ্যাপারেলস কায়সার সানকো জেবিটেক্স জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জেনেসিস ফ্যাশন্স টিএনজেড অ্যাপারেলস নিপা নিটওয়্যারস বটম গ্যালারি বিজিএমইএ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মোহাম্মদপুরের সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেড