নেত্রকোনা: প্রভাবশালীদের মদদের কারণে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোণা ইউনিয়নের কংস নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ফসলরক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের বসত বাড়ি, ফসলি জমি।
এলাকাবাসী জানান, বন্যা-ভাঙন ঠেকাতে ১৯৯২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। এরপরে দীর্ঘ দিন ঠাকুরাকোণা ইউনিয়নের বিজয়পুর, দুর্গাশ্রম, পাহাড়পুর, তাতিয়র, শিমুলহাটী, বাঘরুয়া, পাঁচপাই ও বাংলা গ্রামের ফসলি জমি আর বন্যার কবলে পড়েনি। ঠাকুরাকোণা থেকে জেলার পূর্বধলার জারিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করে ১২টি গ্রামের মানুষ। চলে রিকশা, অটো রিকশা, মোটরসাইকেল।
সর্বশেষ ২০১০ সাল থেকে ঠাকুরাকোণা ইউনিয়নের বাঘরুয়া, পাঁচপাই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ সংস্কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবারের বন্যায় সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। ভাঙনের পাশাপাশি তলিয়ে যায় ফসলি জমি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের বসত বাড়ি, ফসলি জমি।
তারা বলেন, প্রভাবশালীদের মদদে রাতের আঁধারে এল.পি হারুণ, এস.এম কাকন নামে দু’টি বড় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করায় হুমকিও দিচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীদের এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তারা আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিস কয়েকজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবু বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
সদর উপজেলার দূর্গাশ্রম গ্রামের সমাজসেবক ইবনে হায়দার জাহান বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেলে আমাদের এলাকার বিশাল ক্ষতি হবে। বাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব না হলে প্রতিবছর বর্ষার পানি ঢুকে ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাবে। যাতায়াত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খালপাড় গ্রামের শিক্ষক নূরুল আমিন জানান, গত ক’বছরে আমাদের কয়েকজনের বাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে একদিকে যেমন ফসল তলিয়ে যাবে, অন্যদিকে ঘরবাড়ি শূন্য হয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হবে খোলা আকাশের নিচে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, বাঘরুয়া গ্রামের অংশে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাঁধের কাছে নদী থেকে বালু উত্তোলন খুবই বিপজ্জনক। এতে যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম আশ্বাস দিয়েছেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তদন্ত করে শিগগিরই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।