Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চোখ বুজে রায় শুনলেন খালেদা, এরপর শূন্য দৃষ্টি


৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৯:৫৪

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট 

ঢাকা: ঠিক দুপুর ২ টা ২৯ মিনিট। ঢাকা বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান রায় উচ্চারণ করলেন। খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। একবার বিচারকের দিকে তাকালেন খালেদা জিয়া। চোখে শূন্য দৃষ্টি। ততক্ষণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে ফেললো সদ্য সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে। পুরোই তাদের বেষ্টনিতে চলে গেলেন। আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে তাকে দেখার কোনও সুযোগ থাকল না। তবে এর আগে রায় ঘোষণার পুরোটা সময় খালেদা জিয়া ছিলেন পুরোপুরি চুপ।

বিজ্ঞাপন

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বকশীবাজার এলাকায় অবস্থিত বিশেষ জজ আদালত পাঁচ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ১১ টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই মামলার রায় দেন। তিনি রায় ঘোষণার সময় বলেন, প্রসিকিউশন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এবং আসামিপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।  এরপরও শারীরীক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ  দেওয়া হলো। মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেওয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা। মামলার অন্য আসামিদেরও একই দণ্ড দেওয়া হয়।

বিশেষ এই আদালত প্রাঙ্গনে খালেদা জিয়া আসেন দুপুর পৌনে ২টায়। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে এজলাসে ঢোকেন। পরনে অফ হোয়াইট শাড়ি এবং গায়ে প্যাঁচানো পাতলা চাদর। এজলাসে ঢুকেই নির্ধারিত চেয়ারে বসেন। চেয়ারে দুটি ছোট কুশন। চেয়ারের সামনে দুটি ছোট টেবিল। তার একটিতে একটি ছোট পানির বোতল ও একটি টিস্যু বক্স।

এজলাসে ঢুকে চেয়ারে বসে হাত ব্যাগটি ছোট্ট টেবিলে রাখলেন। পরপরই একবার চেয়ার ছেড়ে উঠে ভেতরে যান এবং কিছু সময় পর এসে চেয়ারে বসেন।

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়া এজলাসে পৌঁছানোর বিশ মিনিট পর বিচারক তার আসনে বসেন। এরপরপরই রায় পড়া শুরু করেন। ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনাতে থাকেন তিনি।

পুরোটা সময় জুড়েই খালেদা জিয়া ছিলেন ভাবলেশহীন, বিমর্ষ এবং মাথা নিচু করে। প্রায় পুরোটা সময় তিনি চোখ বুজে ছিলেন, কখনও কোলের ওপরে একহাতে আরেক হাত ধরে ছিলেন, কখনও বসেছিলেন চেয়ারের দুই হাতলের ওপর দুই হাত রেখে।

খালেদার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, মহিলা দল সভাপতি আফেরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও  গৃহসহায়ক ফাতেমা বেগম।

রায় ঘোষণার পুরোটা সময়ে খালেদা জিয়া ছিলেন নিশ্চুপ। তবে রায় ঘোষণার পরপরই এজলাশে থাকা বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নো নো নো….ফলস কেইস বলে চিৎকার করে ওঠেন এবং সেই মুহূর্তে বিচারক তার আসন ত্যাগ করেন। এর পরপরই খালেদা জিয়াকে ঘিরে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ২টা ৫৭ মিনিটের দিকে পুলিশের একটি জিপে করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।

তবে রায় ঘোষণার পর সেখানে উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খান, খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরীসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ছিলেন নীরব এবং বিমর্ষ। তাদের কাউকে কাউকে কাঁদতেও দেখা যায়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রায় ঘোষণার পরে পাশের টেবিলে হাত রেখে ফোনে কথা বলছিলেন আর মাটিতে পা ঠুকছিলেন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানাসহ আইনজীবীরা চেয়ারে বসে ছিলেন বিচ্ছিন্নভাবে।

এই মামলায় খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান সারাবাংলাকে বলেন, এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার আগে তিনি তাদেরকে আপিল করার কথা বলে গেছেন। তার কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার কথা বলেছেন আর বলেছেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে।

সারাবাংলা/জেএ/এমএস

 

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর