ডাকসু নেতাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন সাধারণ শিক্ষার্থীদের
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৪
ডাকসু নেতাদের ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ছয় মাস পার হলেও আবাসন সংকট নিরসন এবং গণরুম-গেস্টরুমের নির্যাতন বন্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি ডাকসু নেতারা।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ তোলেন।
এছাড়া প্রথম বর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের বৈধ আসন নিশ্চিতে হলগুলোকে বহিরাগত ও অছাত্রমুক্ত করতে হবে।
এছাড়া গণরুম ও গেস্টরুমে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সব ধরণের অত্যাচার ও নির্যাতন বন্ধেরও দাবি জানান।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চার নামে তার আদর্শকে কলুষিত করে কিছু কর্তৃত্ববাদী উচ্ছৃঙ্খল ও সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার শিক্ষার্থী। তারা নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম এবং গণরুমে অত্যাচার করে। যেখানে বঙ্গবন্ধু তার সহযোগীদের নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, সেখানে তার অনুসারী তার প্রেমী নামধারী যারা শুধু স্লোগান দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে তারা গেস্টরুম-গণরুমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন প্রাঞ্জল শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক ও পাশবিক নির্যাতন করে।
এসময় গেস্টরুম-গণরুমে শৃঙ্খলা ভাঙতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই গেস্টরুম গণরুমের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। এই কারাগার থেকে মুক্ত হতে হবে। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাদেরকে প্রতিবাদ করতে হবে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠতে হবে।’
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজাহান তামীম বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। প্রথমে আমি একটি হলের গেস্টরুম-গণরুমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম আমি এখান থেকে চলে গেলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। ভাবলাম, জাতির মেধাগুলোকে এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে উদ্ধার করতে সবাই মিলে প্রতিবাদ করা দরকার।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের সনজিত দাদা মধুর ক্যান্টিনে এসে চা খেতে আসেন, র্যাকেট খেলতে আসেন। এসবের প্রটোকল আমাদের দিতে হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব প্রটোকল দিতে হবে কেন? আমরা এই ধরণের প্রটোকলের রাজনীতি এবং দখলদারিত্বমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।’
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘বৈধ সিট আমার অধিকার, সাধ্য আছে কার, সে অধিকার রুখবার’, ‘হলে থাকে বহিরাগত, ডাকসু তুমি কী করো’, ‘অছাত্রমুক্ত হল চাই, প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিট চাই’, ‘আর কতো স্বপ্নেরা গণরুমে পঁচে মরবে’, ‘গেস্টরুম-গণরুমের নামে নির্যাতন বন্ধ করো’ ইত্যাদি দাবি লেখা ছিল।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে কলাভবন প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে ঘুরে আবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।