রোকেয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৪৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদের নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রোকেয়া হল থেকে বিক্ষোভটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে যায়। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে রোকেয়া হলের নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে একটি অভিযোগপত্র দেন।
বিক্ষোভ মিছিলে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগকারী রোকেয়া হলের কিছু শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রোকেয়া হলের নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য হয়েছে তাতে হলের অধ্যাপক জিনাত হুদা, আমাদের লজ্জা হয় তাকে অধ্যাপক বলতে।’ এছাড়া রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘আমরা দেখেছি এই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে মার্চ মাসে ডাকসু নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছে তারা আছে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা বলে থাকি এই নির্বাচন অবৈধ হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথাকে খেলাপ করে, জন-মানুষের কথা এড়িয়ে গিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করছে। আমরা দেখছি সেই দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তারা হলের কর্মচারীদের কাছে থেকে টাকা নিচ্ছে, টাকা নিয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। আর হলের প্রাধ্যক্ষ সরাসরি এই ঘটনায় যুক্ত।’
বিক্ষোভকারীরা জানান, তাদের কাছে অনেক তথ্য, নথি ও প্রমাণ রয়েছে মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে হলের ভিপি-জিএস, হলের প্রাধক্ষ্য হল ছাত্রলীগ এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।
বিক্ষোভে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যে ২ কোটি টাকার চেকের দুর্নীতি হয়েছে সেখানে ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে এই দুর্নীতি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নিয়োগ-বাণিজ্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনারা রুখে দাঁড়ান। এগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই সব সময় সোচ্চার থাকতে হবে এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি রাজপথে নামে এবং সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাহলে প্রশাসনের লেজুড়বৃত্তির দুর্নীতি বন্ধ হবে।’
স্বতন্ত্র জোটের অরণী সেমন্তি খান বলেন, ‘আমরা এখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনেকবার জড়ো হয়েছি। আমাদের বারবার জড়ো হতেই হবে। মেয়েদের হলগুলোতে কোনো বদল আসে না, হলগুলোতে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের বাথরুম কিন্তু জিনাত হুদা বাসায় ২১ লাখ টাকা নিয়ে বসে থাকে। এইটা শুধু একটা হলের প্রভোস্টের কথা না প্রতিটা হলে এরকম অবস্থা বিরাজ করছে। এ টাকা ছাত্রলীগের নেতা নেত্রীদের পকেটে যায় অথচ তারা নির্লজ্জের মতো আপনার ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই কর বাঁচতে চাই’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘রাজপথের সংগ্রাম চলছে চলবে’, ‘জিনাত হুদার গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘নিয়োগ বাণিজ্য যেখানে লড়াই হবে সেখান’, ‘জিনাত হুদা জবাব চাই, আমার বোন লাঞ্ছিত কেন’, ‘শিক্ষা ব্যবস্যা একসাথে চলে না’ এসব কথা বলে স্লোগান দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহায়ক পদে এক জন, বাগানের মালি পদে এক জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে তিন জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তিন জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু গত ৩১ আগস্ট শ্রবণা শফিক দীপ্তি তার ফেইসবুক একাউন্টে হলের কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের মদদে হল সংসদের ভিপি-জিএস, হল ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২১ লক্ষ লেনদেনের অভিযোগ এনে একটি পোস্ট করেন। উক্ত পোস্টটি আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গত সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) অভিযোগকারী দীপ্তিকে নোটিশ পাঠিয়ে মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হল প্রাধ্যক্ষ অফিসে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ডেকে নিয়ে অভিযুক্তরা তাকে হেনস্তা করেন এবং এর ভিডিও ধারণ করেন। অভিযুক্তরা দীপ্তিকে বিভিন্ন কটু কথা বলে মৌখিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং বিভিন্ন হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে দীপ্তসহ রোকেয়া হলের কিছু শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে রোকেয়া হলের নিয়োগ বাণিজ্যের এই অভিযোগ করেন।