Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অস্ত্র দিয়ে শান্তি নিশ্চিত হয় না: ঢাকায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী


৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৪৮

ঢাকা: ‘অর্থ খরচ করে অস্ত্র কিনে কখনো শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। একমাত্র বন্ধুত্ব, সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। শান্তির জন্য অস্ত্রের পেছনে অর্থ খরচ কমিয়ে বন্ধুত্ব ও সংলাপের পথে বিনিয়োগ করতে হবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বলেছি, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য ইরান আগামীকালই সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন।

রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে গণমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধির আলাপ হয়।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় ২১ রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওআরএ (ভারতীয় মহাসগার রিম অ্যাসোশিয়েশন)-এর মন্ত্রী পর্যায়ের তৃতীয় সম্মেলন আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে। এই সম্মেলনে অংশ নিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বাংলাদেশ সফর করছেন।

জাভেদ জারিফ বলেন, ‘ঢাকা-তেহরানের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সামনের দিনগুলোতে এই সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে আরও ঘনিষ্ট হবে। ঢাকা সফরে এসে আমি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। উভয়ের সঙ্গেই খুব ফলপ্রসু আলোচন হয়েছে।’

‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে’—উল্লেখ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান, ন্যানো টেকনোলজি, জ্বালানি, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প এবং পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য এসব বিষয়ে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেশি শক্তিশালী করতে হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে অনেক শক্তিশালী পুরাকীর্তির ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা এই ক্ষেত্রেও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে পারি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে আমরা আগামী বছর একটি সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছি। আর সেমিনারটি হবে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম-শতবার্ষিকীর ওপর।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের যথাযথ সম্মান এবং পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। এই সংকট সমাধানে বিশ্বকে দৃশ্যমান কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার দিতে বাধ্য হয়।’

বিশ্বের শান্তি ও যুদ্ধ প্রসঙ্গে জাভেদ জারিফ বলেন, ‘গত বছর সৌদি আরব অস্ত্র কেনা বাবদ ৮৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সৌদি আরব এই সকল অস্ত্র পশ্চিমা বিশ্ব থেকে কিনেছে নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের প্রতিবেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। সংযুক্ত আরব আমিরাত গত বছর ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে অস্ত্র কেনার জন্য। এক সময় সৌদি আরব ইরাকের পেছনে ৭৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইরানকে শায়েস্তা করতে। কিন্তু অর্থ খরচ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। অস্ত্র দিয়ে কখনো শান্তি নিশ্চিত করা যায় না। একমাত্র বন্ধুত্ব, সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বলেছি, আমরা শান্তির জন্য আগামীকালই সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। কেন না অস্ত্র দিয়ে আঞ্চলিক বা কোনো একক দেশের নিরাপত্তা আর শান্তি নিশ্চিত করা যায় না। আর প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র বৈষম্য (আর্মস ইমব্যালান্স) থাকলে শান্তি আসে না। সেনা (মিলিটারি) দিয়ে কখনও বিজয়ী হওয়া যায় না। বিজয়ী হতে হলে রাজনৈতিকভাবে এগুতে হয় এবং সংলাপ ও বন্ধুত্বেই তা সম্ভব। শান্তির জন্য অস্ত্রের পেছনে অর্থ খরচ কমিয়ে সংলাপের পথে বিনিয়োগ করতে হবে।’

অস্ত্র ইরান জাভেদ জারিফ যুক্তরাষ্ট্র শান্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর