বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় পরিবেশ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:১৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মনে হয়, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় একটি পরিবেশ বিরাজ করছে। যেখানে এত সুন্দর পরিবেশে প্রত্যেকে মিলেমিশে ধর্মানুষ্ঠান উদযাপন করতে পারি।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ভগবান শ্রীকৃঞ্চের শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে তার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এসব ট্রাস্টে আর্থিক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে তো অনেকেই অর্থশালী সম্পদশালী আছে, আপনাদের কল্যাণ ট্রাস্টে আপনারা নিজেরাও কিছু কিছু যদি অনুদান দেন তাহলে এখানে অর্থ আরও বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে আপনারা অসহায় দরিদ্র বা অসুস্থ মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন। আমি মনে করি, ট্রাস্টের অংক আরও বৃদ্ধি করা সকলেরই দায়িত্ব।
বর্তমানে এ ট্রাস্টে ১০০ কোটি টাকা জমা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মুসলমান ধর্মে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি হেবা আইনে অল্প টাকায় রেজিস্ট্রি করার বিধি রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মুসলমান ধর্মে মেয়েদের জন্য কিন্তু সম্পত্তিতে অধিকার দেওয়া আছে। বাবার বাড়ির সম্পত্তিতেও যেমন আমার অধিকার আছে। স্বামীর বাড়ির সম্পত্তিতেও কিন্তু আমাদের অধিকার আছে। কিন্তু হিন্দু ধর্মে সেটি ছিল না। আমরা উত্তরাধিকার সম্পত্তিটা রেজিস্ট্রেশন করা, যা আগের সাধারণ আইনে করতে গেলে অনেক টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি লাগত। আমরা কম টাকায় রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি।’
‘কারণ আপনার উত্তরাধিকার আপনার সম্পত্তি পাবে। সেখানে আবার আলাদা করে রেজিস্ট্রেশন ফি বেশি দিতে হবে কেন? আর আমরা যদি সেটি ভোগ করি তাহলে অন্য ধর্মালম্বীরা কেন সেই সুযোগটা ভোগ করবে না। সকলের সমান সুযোগ। আমরা এই সুযোগটা করে দিয়েছি।’ সকল ধর্মের জন্যই এটি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, অনেকেই জ্ঞানপাপী আছে। পহেলা বৈশাখ, এটা নাকি হিন্দুয়ানি। সম্রাট আকবর এ ১ বৈশাখ হালখাতা খোলেন এবং উৎসবটা আয়োজন করেছিল। তাহলে এখন সেটাকে অন্য ধর্ম বলে ঠেলে দিলে হবে কী করে? আমরা এখন সেখানে উৎসব ভাতা দিতে শুরু করেছি। কারণ ১৯৯৩ সালে যখন পহেলা বৈশাখ যখন নতুন শতাব্দীতে পদাপর্ণ করি, এই ১৪০০ সাল উদযাপন করার জন্য কমিটি করি। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদেরকে বাধা দিয়েছিল। তাদের মাথায় কী থাকে সেটা তো জানেনই আপনারা? সেটা করতে দেবে না। জোর করে আমরা সেটা উদযাপন করেছিলাম।’
‘আমরা সরকারে এসে এখন এটা উৎসব ভাতা দিয়েছি এবং সকলে মিলেই কিন্তু এ উৎসবটা উদযাপন করছি’ বলে দাবি করেন তিনি।
‘অবশ্য বিএনপি-জামায়াত জোটের চরিত্রটাই এরকম। কারণ আপনারা জানেন যে, তারা কীভাবে অত্যাচার করে নির্যাতন করে, বিভিন্ন ঘটনার পর আপনাদের মন্দির ভাঙা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে। ১৯৯১ সাল আমার এখনও মনে আছে দুর্গম এলাকা সেখানেও মন্দিরগুলোতে হামলা করা হয়েছে, ভাঙা হয়েছে। নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চরম অত্যাচার নির্যাতন হয়েছিল। তখন আমরা ছুটে গিয়েছি সকলের কাছে।’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় সময় সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের চিত্র তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির কাজই ছিল এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো। আবার আক্রমণের শিকার মুসলমান তো আছেই। এইভাবে তারা সবসময় একটা বিভেদ সৃষ্টির করার এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো এতে বিশ্বাস করে না। আমরা মনে করি, এ দেশ সকলের।’
‘আমি আপনাদের এইটুকু বলব, নিজেদেরকে ওই সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু না বলে, এই মাটি আপনাদের, এই দেশ আপনাদের, এই জন্মভূমি আপনাদের। কেন নিজেদের মধ্যেই এ বিশ্বাস থাকবে না। অন্তত আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে এবং আওয়ামী লীগ আছে তখন তো এইভাবে আমরা কখনো ভাগ-বাটোয়ারা করে দেখি না।’
দেশবাসীকে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উৎসবটা ভালোভাবে হোক। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করি। প্রত্যেকটি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা যেন বজায় থাকে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘একসময় দেশে যখন বোমা হামলা এবং অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হল, ঈদের জামাত, সেখানে কিন্তু আমাদের হিন্দু যুব সমাজভাইয়েরা তারা কিন্তু সেই এলাকা পাহারা দিয়েছেন। কেউ যেন এখানে কোনো গণ্ডগোল করতে না পারে। আবার পূজোর সময় আমাদের মুসলমান ছেলেরা ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছে যেন কেউ গণ্ডগোল করতে না পারে। এরকম সহমর্মিতা আমাদের সব থেকে বড় অর্জন।’
‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলব সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়’ বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহসহ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতাদের মধ্যে সুব্রত পাল, বিমল কান্তি দে, শৈলেন্দ্র মজুমদার, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, গৌরাঙ্গ দে, চন্দ্রন তালুকদার, দেবাশীষ পালিত, সুভাস চন্দ্র দাস, গৌরাঙ্গ দেসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।