পিপলস লিজিংয়ের দায় দেনা নিরীক্ষা করবে ‘একনাবিন’
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৪৭
ঢাকা: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফসিএল) এর দায় দেনা হিসাব করতে একটি অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম ‘একনাবিন’ কে পিপলস লিজিংয়ের গত চার বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ‘একনাবিন’ নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। নিরীক্ষা শেষে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা টাকা আদায় সাপেক্ষে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করা শুরু হবে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পিপলস লিজিংয়ে একটা স্পেশাল অডিট করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির গত চার বছরের আয় ব্যয় অর্থ্যাৎ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানির যাবতীয় কার্যক্রম অডিট করা হবে। তবে এটা শেষ করতে কত সময় লাগবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়।
পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম বলেন, ‘পিপলসের দায়, দেনা পরিশোধে একটি অবসায়ক হিসাব খোলা হবে। এই হিসাব থেকেই পরবর্তীতে সব লেনদেন করা হবে। কেউ টাকা জমা দিলে এই হিসাবে জমা হবে। আবার কারো টাকা পাওনা থাকলে তাকেও এই হিসাব থেকে টাকা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘পিপলস লিজিং থেকে আগামী সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির দেনা পাওনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ, দেনার পরিমাণ এবং সম্পদ কোথায় কার কাছে রয়েছে তার বিস্তারিত থাকবে। এই প্রতিবেদন হবে আমার মূল প্রতিবেদন। ওইটা থেকে আমি কাজ শুরু করবো। গত ২১ জুলাই এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।’
পিপলস লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
কতদিন নাগাদ পিপলসের আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমানতকারীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। কারণ আগে টাকা পেলে তারপর তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। কারণ পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে তেমন কিছু নাই। সম্পদ বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ঋণ। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট। এটা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
পিপলসের কাছে পাওনা টাকা কারা আগে পাবেন: পিপলসের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ টাকা পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কেউ থাকলে তাদের ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।
পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তীতে কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। এইক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা উদ্যোক্তা পরিচালক সবাই মালিক। তবে তারা পাবেন যদি আগের ধাপের সবার টাকা পরিশোধ করার পর টাকা অবশিষ্ট থাকে।
এর আগে গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করলে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশ্বস্ত করলেও উদ্বিগ্ন পিপলস-এর আমানতকারীরা
পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। বাকি ৭শ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেনীর আমানত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তবে আমানতের বিপরীতে কাগজে কলমে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হলেও বাস্তবে তিন ভাগের এক ভাগও নেই বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।