অ্যান্টি ইনসেক্ট এনার্জি বাল্বের নামে প্রতারণা
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৯:০৫
আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: “এই বাতি জ্বালালে পোকা-মাকড় ঘরে থাকবে না। উইপোকা, তেলাপোকা দূর হবে।” চিৎকার করে করে বলছেন দোকানী। ফুটপাথ দিয়ে যাওয়ার সময় এই ডাক সুরের মতো গেথে যায় মাথায়। সেই হাঁক শুনে অনেকেই কিনছেন পোকা-মাকড় প্রতিরোধী বাতি বা অ্যান্টি ইনসেক্ট বাল্ব।
তবে এই বাল্ব আদৌ কাজ করে কি না, জানে না কেউ। শুধু মুখের কথার বিশ্বাসে ক্রেতারা কিনছেন এই বাল্ব। কিছুদিন পরে এসে দোকানদারদের সঙ্গে তর্ক, হাতাহাতিও করছেন, এই বাল্ব নাকি মোটেই কোনো পোকা তাড়ায় না। আর দশটা বাল্বের মতো এটাও একটা সাধারণ বাল্বই।
কোটি মানুষের শহর ঢাকা। বিচ্ছিন্ন দুই একটা প্রতিবাদের ঘটনা নূন্যতম প্রভাব ফেলে না বিক্রেতাদের ব্যবসায়। বাল্বের কার্যকরী ক্ষমতা নিত্য-নতুনভাবে প্রচার করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা।
ফেইসবুকেও আছে তাদের প্রচার, নাম সর্বস্ব পেইজ গ্রুপ খুলে দেদারে বিক্রি করছে সেই বাল্ব। এখানে তো এসে বাল্ব খুব ভালো বলে যাওয়া মিথ্যা প্রচারণাও আছে। তবে আইডিগুলোর পিছনে গেলেই পাওয়া যায় অন্ধগলি; সবই ফেইক আইডি।
প্রযুক্তির এই উদ্ভাবনের যুগে একটা বাল্ব পোকা তাড়াবে না এটা অবিশ্বাস করার লোকই বরং বিরল। প্রযুক্তির প্রতি মানুষের এই বিশ্বাস পুঁজি করে চলছে একটি নাম সর্বস্ব পণ্যের ব্যবসা।
গুলিস্তানের ফুটপাতে ইনসেক্ট বাল্বের দোকানী বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি অ্যান্টি ইনসেক্ট এনার্জি বাল্বে দশ রকমের সুবিধা রয়েছে। যেমন, এই বাল্ব জ্বালালে মশা-মাছি ঘরে থাকে না। উইপোকা, তেলাপোকা, ইঁদুর, ছারপোকাসহ নানা ধরনের মারাত্মক পোকা-মাকড় তাড়াতে সাহায্য করে এ বাল্ব। শুধু তা-ই নয় এ বাল্বে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা পর দুই ঘণ্টা ঘরে জ্বালিয়ে রাখলে এর কার্যক্ষমতা বোঝা যায় বলেও জানান তিনি।’
বাবু জানায়, ‘এটা চায়না থেকে আনা হয়েছে। এজেন্টের মাধ্যমে আমাদের হাতে পৌঁছায়। ওনাদের কাছে শুনেছি এই বাল্ব জ্বালালে পোকা-মাকড় দূর হয়।’
তিনি আরও দাবি করেন, এ বাল্বের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তিনি নিজেও এটা ব্যবহার করে দেখেছেন- এই প্রত্যক্ষ ব্যবহারকারীর কথা আপনি অবিশ্বাস না করে পারবেনই না।
বাল্ব কিনে প্রতারিত হওয়া একজন জহির, কাজ করেন একটি এফএম রেডিওতে, সারাবাংলাকে বলেন, ‘হকারদের কথায় বিশ্বাস করে মাস দুয়েক আগে গুলিস্তানের ফুটপাথ থেকে একটি অ্যান্টি ইনসেক্ট এনার্জি বাল্ব কিনি ৬০ টাকায় দিয়ে। তারা বলেছিল, এটা ব্যবহারে ঘরে মশা-মাছি থাকবে না। কিন্তু ব্যবহারের পর তার কিছুই দেখলাম না।’
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রনি জানান, ‘আমিও একটি অ্যান্টি ইনসেক্ট বাল্ব কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম মশার কয়েল কেনা লাগবে না। পরে দেখলাম এ বাল্বে কোন কাজই করে না বরং এ বাল্বের দিকে তাকালে চোখ ব্যথা করে। তাই এখন আর এই বাল্ব ব্যবহার করি না।
সারাবাংলা/এআই/এমআই/এমএ