Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়পুরহাটে ৭২ স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, কমছে শিক্ষার্থী


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:৪৮

জয়পুরহাট: শ্রেণিকক্ষ সংকট, পলেস্তরা খসা জীর্ণ ভবন, ভাঙা দরজা-জানালা, টিনের ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে এবং কখনও কখনও রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাঠদান চলছে জয়পুরহাটের ৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অর্থাভাবে এগুলোর সংস্কারও করতে পারছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিরুপায় হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব ভবনেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭২টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ৭২টি বিদ্যালয়ে। এই ভবনগুলোর কোনো কোনোটি এরই মধ্যে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কয়েকটিতে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চললেও সেগুলোর অবস্থা বেহাল। কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনে পলেস্তরা খসে মরিচা পড়া রড বের হয়ে গেছে। অর্থাভাবে এগুলোর সংস্কার করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হোপপীর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবনের এক পাশে অফিস ঘর। আরেক পাশেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ভবনটির অবস্থা এতটায় নাজুক যে, পলেস্তরা খসে রড বের হয়ে গেছে। এমনকি ভবনটির দরজা-জানালাও ভাঙা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এটিকে অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তবে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যক্ত ভবনের একটিতে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান এবং অন্যটিতে অফিস করা হয়েছে। আর টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করে অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান চলছে।’

জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি, মাটির স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে এবং রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পাঠদান চলছে জয়পুরহাট সদরের চক গোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭১ জন। শিক্ষকদের দাবি, বিদ্যালয় ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।

চক গোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির সময় টিনের চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। মাটির মেঝেতে পানি পড়ে কাদা হয়ে যায়। ফলে ক্লাস নিতে পারেন না শিক্ষকরা। প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষটি টিনের হওয়ায় গরমের সময় সেখানে টেকা দায় হয়ে যায়। তাই শিশুদের বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায় না।

আক্কেলপুরের দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ বিদ্যালয়ে টিনশেডের একটি পাকা ও জরাজীর্ণ মাটির একটি ভবনে চলছে পাঠদান। মাটির ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেয়াল ফেটে গেছে। কোনও কোনও জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। দরজা জানালার অবস্থাও খুব খারাপ। বর্ষার সময় টিন দিয়ে পানি পড়ে। আবার ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি হলে তাদের আর ক্লাস হয় না। বিদ্যালয়ের সবগুলো কক্ষেই পানি পড়ে। আকাশে মেঘ দেখলেই বাবা-মা স্কুলে আসতে দিতে চান না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেনা বেগম বলেন, ‘অনেক পুরানো এ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন হবে হবে করে হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন আগে নতুন ভবনের জন্য মাটিও পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু ভবন না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাটির ঘরে পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছি।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার হালট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৪০ জন।

প্রধান শিক্ষক নাদিরা মুশফিকা বানু জানান, স্কুল দেখতে সুন্দর না হলে শিশুরা আসতে চায় না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রঙ করা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে নতুন ভবন। কিন্তু ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে ক্লাসে থাকতে পারে না। বই খাতা ভিজে যায়।

বিদ্যালয়গুলোর এমন বেহাল দশা নিয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল কবির বলেন, ‘স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ জেলার ৭২টি বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অবস্থা অনুযায়ী এসব ভবন সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের ব্যাপারে সুপারিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

জয়পুরহাট ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শ্রেণিকক্ষ সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর