৪৭ লাখ টাকা ভ্যাট দেয়নি স্টার মেটাল
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:৪১
ঢাকা: স্টার মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৪৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৮৬ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে তাদের পাঁচ বছরের সিএ রিপোর্ট পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি উপকরণের ব্যবহার কম দেখিয়েছে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে গৃহীত রেয়াত নিয়েছে ১৪ লাখ ২২ হাজার ২৫৯ টাকা। আর এই ফাঁকি দেওয়ায় সম্প্রতি ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামা সম্বলিত নোটিশ জারি করছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, স্টার মেটাল উপকরণের (টিন) ব্যবহার কম দেখিয়ে ফাঁকি দিয়েছে ১৩ লাখ ৫২ লাখ ৭৪ টাকা আর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ হয়েছে ১২ লাখ ১ হাজার ৫৮৬ টাকা। এছাড়া সিএ রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর বাবদ আদায় করেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং এর সাথে সুদ যোগ হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ টাকা। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে আদায়যোগ্য মূসকের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১২ টাকা এবং এর সাথে সুদ হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩২ টাকা। এদিকে বর্জ্য বিক্রয় বাবদ অনাদায়ী মূসক ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮২ টাকা, যার সাথে সুদ হয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩০৮ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি মোট মূসক ফাঁকি দিয়েছে ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৫২ টাকা; যার মোট সুদের পরিমাণ ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৪ টাকা।
সূত্র আরও জানায়, সাভারের হেমায়েতপুরের মেসার্স স্টার মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট। আর এই নিরীক্ষার সময় প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমন অনিয়ম মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৩, ৩১, ৩২, ৩৫ এবং মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা, ১৯৯১-এর বিধি ১৮ক, ২২, ২৩ ও ২৪ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আইনের ধারা ৩৭ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
শুধু তাই নয়, উৎসে কর্তৃনকারী সত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর আদায় বাবদ কোনো অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোনো ঘোষণা নেই প্রতিষ্ঠানটির। আর বর্জ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বিভাগীয় অফিসের কোনো তত্ত্বাবধানও নেই। স্টার মেটালের এমন কার্যক্রমে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হাতছাড়া হয়েছে। ফলে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ে প্রতিষ্ঠানটি বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর আইনের ৫৫ (১) অনুযায়ী দাবিনামা সম্বলিত নোটিশ জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ফাঁকি দেওয়া অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর আইনের ১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে স্টার মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের সেলস অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। আর আমি এই মুহূর্তে মার্কেটিংয়ের কাজে ঢাকার বাইরে। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি থাকলেও কোনো কিছু না দেখে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গাইড লাইন অনুযায়ী ভ্যাট কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। আমরা এনবিআরের দেওয়া গাইড লাইন অনুসরণ করছি। নিরীক্ষা কার্যক্রমে স্টার মেটালের বিভিন্ন অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধির বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। দাবিনামার এই অর্থ প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।’