আমার মতো এমন কষ্ট যেন আর কাউকে পেতে না হয়: নানক
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:০৬
ঢাকা: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বাবা-মা হিসেবে এ যে বড় কষ্ট, এ যে কত বড় কষ্ট। আমার মত যেন আর কাউকে এমন কষ্ট পেতে না হয়।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) একমাত্র পুত্র সায়াম-উর-রহমানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাদ আসর ধানমন্ডির বাসায় কোরানে খতম মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে পরিবারের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার সময় নানক এ কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সৈয়দা আরজুমান নার্গিস দম্পতির একমাত্র ছেলে সায়েম-উর রহমান সায়েম ২০১১ সালে রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সায়েম। এতে আহত হন তার মামা সৈয়দ গোলাম পিউ (৩২) ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চিত্রগ্রাহক এনামুল কবির (৩০)।
সেদিন নানকের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা শোক-সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে নানকের বাসায় ছুটে যান।
বিয়ের মাত্র দুবছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে সায়েমের স্ত্রী আনিকা রহমানও মেয়ে মেহরিশের মাঝে স্বামী হারানোর শোক-ব্যথা ভুলে থাকার চেষ্টা করে। নানক বলেন, ‘আজকের দিনটি এলে আপনারা খবর নেন মিলাদ এবং দোয়া মাহফিলল কোথায় হবে। আমি কি বলব, আমি ব্যাথতুর মানুষ। আমি এক বুক জ্বালা-কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি।’
সায়েম-উর রহমান যেদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় সেদিন তার আট মাসের শিশুটি আজ নয় বছরে পা দিয়েছে। সে তার বাবার জিয়ারত করতে গিয়েছে। তাকে সেই কবরের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
নানক বলেন, ‘আমি পিতা হিসেবে কৃতজ্ঞ। আপনারা এসেছেন। কিন্তু আমি যা হারালাম তা আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না। আপনারা দোয়া করবেন। দোয়া করবেন আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য। দোয়া করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। যিনি যার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, আরামকে হারাম করে এই দেশকে উন্নয়ন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার জন্য দোয়া করবেন। আমরা সবাই চলে যাব একদিন। কেউ আগে আর কেউ পিছে।’
‘মায়া ভাই এখানে বসা আছে। আমার ছেলেটির লাশের কফিন তার কাঁধে। সেই ছবি আমি প্রতিনিয়ত দেখি সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে। সেই ছবিগুলো নিয়ে আজকে আমি বেঁচে আছি।’
‘আপনারা দোয়া করবেন সায়েমের স্ত্রীর জন্য। ওই মেয়েটি বড় দুঃখী মেয়ে। অল্প বয়সে সে তার স্বামীকে হারাল। সে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গেল। আমি হারালাম আমার সন্তান। আমার মেয়ের ঘরের নাতিটি এখানে বসা আছে। আপনারা দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়াই আমার পাথেয়।’
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কোরআন তেলওয়াত করেন হাফেজ মো. মেরাজুল ইসলাম মিলন। হাফেজ মাওলানা রফিকুল ইসলাম তানজিমসহ অনেকে।
মরহুমের মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। বাসার বেজমেন্টে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মঞ্চ করা হয়। এ ছাড়াও বাসার দ্বিতীয় তলারর কমিউনিটি সেন্টারে পুরুষদের জন্য এবং বাসার ১২ তলায় মহিলাদের জন্য পৃথক করে মিলাদ ও দোয়ার সুব্যবস্থা করা হয়। তারপরও জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাসার সামনের রাস্তাতেও বিপুল সংখ্যক চেয়ার দিয়ে মরহুমের জন্য মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
মরহুমের পিতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক আগত শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান। মাওলানা তারিকুল ইসলাম মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ, সাবেক ছাত্রনেতা ইসহাক আলী খান পান্না, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।