Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বনসাইপ্রেমী শিক্ষকের প্রদর্শনীতে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কাঠ-পাথরের শিল্পকর্ম এক সময় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যে শিল্পকর্মের মাধ্যমে বনসাই বানানো হয়, তা শেষ হয় না। এজন্য বনসাইকে এক অসমাপ্ত শিল্পকর্ম হিসেবে চিত্রিত করেছেন বোদ্ধারা। যদিও অসমাপ্ত শিল্পকর্ম, কিন্তু একেকটি বনসাই তবুও একেকটি রূপসী বৃক্ষ। আর যারা বনসাইয়ের প্রেমে মজেছেন, তারা বলছেন এটি জীবন্ত শিল্পকর্ম।

এ রকম শত বনসাইয়ের মেলা বসেছে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির জয়নুল গ্যালারিতে। হৃদয়ের সব ভালোবাসা উজাড় করে তৈরি এসব বনসাইকে এক প্রদর্শনীতে জড়ো করেছেন স্কুলশিক্ষক আরিফ রহমান। এই জীবন্ত শিল্পকর্ম দেখতে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে প্রদর্শনীতে ভিড় করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিভিন্ন বয়সী লোকজন। যেন শিল্পকলার জয়নুল গ্যালারিতে চলছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা।

বনসাই

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার দুইদিনের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যদিও বনসাই চাষকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলার চেষ্টা করছেন অনেকে, কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের ইট-পাথরের নগরজীবনে যেখানে এক চিলতে জায়গার বড্ড অভাব, সেখানে বনসাই আমাদের সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া দিচ্ছে। একেকটি বনসাই যেন সতেজদীপ্ত সবুজ তারুণ্য। এতটুকু বৃক্ষ, দেখলেও মনটা ভালো হয়ে যায়। আরিফ রহমান হৃদয়ের সবটুকু সৌন্দর্য্য, গভীর অনুভব দিয়ে বনসাই শিল্পকর্ম করে যাচ্ছেন। তার মতো সব মানুষের হৃদয়ের ভালো অনুভূতিটুকু সবুজ বনসাইয়ের মাধ্যমে ফুটে উঠুক।’

বিশেষ অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের চট্টগ্রামের উপপরিচালক ড.আজাদ বুলবুল বলেন, ‘আরিফ রহমান অঙ্কের শিক্ষক। অঙ্কের জটিল মানুষটি প্রকৃতির প্রেমে এত নিবিষ্টভাবে মজেছেন, এটা বিস্ময়কর। একজন শিক্ষকের চরিত্র যদি আমরা দেখি, তিনি শিক্ষকতা করেন, ছাত্র পড়ান, মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করেন এবং এক সময় অবসরে যান। অথচ শিক্ষক আরিফ রহমান এই চর্চার বাইরে গিয়ে নিজের একাগ্রতার মধ্য দিয়ে বিশাল মহীরূহকে ছোট্ট গাছে পরিণত করে নিজের ঘরে ঠাইঁ দিয়েছেন।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘প্রকৃতির একটি গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ হচ্ছে বনসাই। একজন বনসাইবিদন মন দিয়ে, চোখ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, ভক্তি-শ্রদ্ধা দিয়ে এই শিল্পকর্ম করেন। নিজের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আমি বলব, এটি একটি মহৎ শিল্পকর্ম।’

কারিতাস, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী আরিফ রহমানের মধ্যে আমরা সব সময় প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। এক সময় বাসার ছাদে সবজি, ফলের চাষ করত। এই চাষ করতে গিয়েই সে বনসাইয়ের প্রেমে পড়ে গেল। আমরা যারা তাকে নিবিষ্টভাবে অনুসরণ করি, বনসাইয়ের জন্য তার মধ্যে নিবিষ্ট প্রেম দেখি। প্রকৃতির জন্য আরিফের এই ভালোবাসা অনেককে অনুপ্রাণিত করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’

এতে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাসিম হাসান, সাংবাদিক কাশেম মাহমুদ এবং প্রদর্শনীর আয়োজক বনসাইপ্রেমী শিক্ষক আরিফ রহমান।

বনসাই

শিল্পকলার জয়নুল গ্যালারির তিনটি কক্ষজুড়ে শতাধিক বনসাইয়ের সমাহার। লাখ টাকা দামের চায়না বট যেমন আছে, ১০ হাজার টাকা দামের ঝুমুরও আছে। যজ্ঞডুমুর, পামনা, বারবাডোজ চেরি, গার্ডেন শেওড়া, পাকুড় বা অশ্বত্থ, কামিণী, আমবট, তেঁতুলসহ অসংখ্য প্রজাতির বনসাই নিজের বাগান থেকে এনেছেন আরিফ রহমান।

প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রকাশ দাশগুপ্ত। তিনি সারাবাংলার কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে, ‘প্রকৃতিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে, কল্পনার রঙ আর সৌন্দর্য্যের মধ্য দিয়ে ছকে আবদ্ধ করা, এটা একটা শিল্পের অংশ। আমার এই প্রদর্শনী দেখে খুব ভালো লেগেছে। বনসাইপ্রেমী আরিফ রহমানের শিল্পের প্রতি রসবোধ মুগ্ধ হওয়ার মতো।’

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় মিত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকৃতিতে আমরা যে গাছগুলোকে অনেক বড় দেখি, সেগুলোকে ঘরে এনে ছোট আকৃতি দেওয়ার মধ্যেও নান্দনিকতা আছে। বনসাই গাছগুলো দেখে বুঝলাম, এটা অবশ্যই একটি নান্দনিক শিল্পকর্ম।’

সেন্টমেরিস স্কুলের শিক্ষিক ইভা রোজারিও সারাবাংলাকে বলেন, ‘এত বড় বড় বৃক্ষকে কিভাবে ছোট্ট একটি টবে রেখে ছোট্ট আকার দেওয়া যায়, সেটা দেখে আমি মুগ্ধ। আমার কাছে এটা একটা বিমূর্ত শিল্প।’

নগরীর মেহেদীবাগ থেকে যাওয়া গৃহিণী সৈয়দা আনজুমান আরা ম্যাগনেট সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবারও আরিফ রহমানের বনসাই প্রদর্শনীতে এসেছিলাম। এবার এসে মনে হচ্ছে উনার বাগান আরও বিস্তৃত হয়েছে। সবগুলো সতেজ গাছ উনি নিয়ে এসেছেন। উনি হয়তো শখের বশে বনসাই বাগান করছেন, কিন্তু এটা শিল্পমূল্য অনেক বেশি।’

আরিফ রহমান চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর থেকে তিনি শিক্ষকতা পেশাতেই আছেন। চট্টগ্রাম নগরীর শেরশাহ হাউজিং সোসাইটিতে তাঁর নিজস্ব ছয়তলা ভবন। সেই ভবনের ছাদেই বনসাইয়ের বসতি গড়ে তুলেছেন তিনি, যেখানে ৪০ প্রজাতির পাঁচ শতাধিক বনসাই আছে।

আরিফ রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার প্রদর্শনী আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘বনসাইকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, মানুষের কাছে বনসাইকে পরিচিত করানো এবং এই শিল্পকর্মের প্রসার ঘটানো। আমি এখানে ২০ প্রজাতির শতাধিক গাছ এনেছি। বনসাইকে আমরা বলছি লিভিং আর্ট বা জীবন্ত শিল্পকর্ম। এই শিল্পকর্ম যদি প্রত্যেকে বাড়ির ছাদে কিংবা বাসার সামনে হয় তাহলে এই শহর সবুজে ভরে উঠবে।’

টপ নিউজ বনসাই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর