হংকংয়ে বন্দি প্রত্যর্পণ বিল বাতিল, আন্দোলন থামেনি
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:২৫
হংকংয়ে টানা চার মাস ধরে চলতে থাকা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ সপ্তাহে বন্দি প্রত্যর্পণ বিল বাতিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। কিন্তু এ ঘোষণার পরও পাঁচ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী আন্দলোন থামেনি। অথচ এই আন্দোলন বন্দি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতেই প্রাথমিকভাবে তৈরী হয়েছিল।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জশুয়া ওং হংকং ফ্রি প্রেসকে জানিয়েছেন, আন্দলোনের এ পর্যায়ে এসে শুধুমাত্র বিল বাতিল। এটা কোন প্রাপ্তিই না। আমাদের বাদবাকী দাবিগুলো বিশেষ করে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার স্বাধীন তদন্তের দাবিতে আন্দোলন চালিয়েই যেতে হবে।
এদিকে, স্থানীয় সাউথ চায়না মর্ণিং পোস্ট জানিয়েছে প্রিন্স এডওয়ার্ড মেট্রোরেল স্টেশনে সর্বশেষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় পুলিশ সাবওয়ে কারের ভেতর পিপার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। এছাড়াও আন্দলোনকারীদের মারধর করার পর তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরনে বাঁধা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমান ফোর্স মোতায়েন করে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে তারা। তাছাড়া,অপ্রয়োজনেই টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, বিনব্যাগ রাউন্ড ব্যবহার করে আন্দোলন করার গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর ক্ষমতার অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ। এমনকি আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের পুলিশী হেফাজতে নেওয়ার সময়, অনেকের সাথে যৌন হয়রানি মূলক আচরনও করেছেন পুলিশের কিছু কিছু সদস্য।
শনিবারের (৭ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনে পুলিশ এবং আন্দলোনকারী উভয়পক্ষেই সহিংস আচরন লক্ষ্য করা গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো হংকং ফ্রি প্রেসকে জানিয়েছে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যেও উভয়পক্ষেরই প্রতিনিধি রয়েছে। কিন্তু ফোর্স মোতায়েনের আন্তর্জাতিক বিধিমালার তোয়াক্কা না করেই অতিরিক্ত পুলিশ নামানোর বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি হংকংয়ের পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
এ কারণেই আন্দোলনে হামলা এবং পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট পুলিশ কমপ্লেইন্ট কাউন্সিলই (আইপিসিসি) এ ঘটনার তদন্ত করবে। এই সংস্থাটি সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে পারবে বলে আন্দোলনকারীরা মানতে পারছেন না। আন্দোলনকারীরা হংকং ফ্রি প্রেসকে জানিয়েছেন, যদি ক্যারি ল্যাম প্রশাসন পুলিশের অপরাধ তদন্তের কোন সুরাহা না করতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করে এই ধরনের বর্বরতার বিচার চাওয়া হবে।
জাতিসংঘের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংক্রান্ত আচরণবিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, পুলিশ ফোর্স কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনের ভিত্তিতে এবং আনুপাতিক হারে মোতায়েন করতে হবে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, হংকং পুলিশের এই আচরণ মানবিক মানদন্ড সংক্রান্ত সাংবিধানিক ঘোষণার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
এর আগেও, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আন্দলনে পুলিশের বাড়াবাড়ির কথা উল্লেখ করে হংকংয়ের নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্ধনে হংকয়ের পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে বর্বরোচিত আচরণ করেছে। তবে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে। হংকংয়ের ভূখন্ডের ঘটনা একান্তই হংকংয়ের নিজস্ব ব্যাপার এখানে চীনের কোন ভূমিকা নেই।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন পুলিশের জন্য আন্দোলন থামানোর উপকরনগুলো (লেস লিথাল ওয়েপন) কেনার ব্যাপারে হংকং আন্তর্জাতিক আচরণবিধি মেনেছে কি না, সে ব্যাপারেও তদন্ত করতে হবে। তার মধ্য দিয়েই আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের অসংযত আচরনের মূলে পৌছানো সম্ভব বলেও তারা মতামত দিয়েছেন।
আন্দোলন ক্যারি ল্যাম বন্দি প্রত্যর্পণ বিল মেট্রোরেল স্টেশন লেস লিথাল ওয়েপন হংকং হংকং পুলিশ