Monday 09 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগস্টে ঢামেকেই চিকিৎসা নিয়েছে ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী


৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৬ | আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা অতীতের সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে। এর আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম থাকলেও এবার সেই মাত্রা কয়েকশগুণ ছাড়িয়ে যায়। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তবে এবার সবচেয়ে বেশি চাপ সামলাতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় গত আগস্টে ঢামেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। যদিও এই সংখ্যা দিন দিন কমছে।

হাসপাতালটির কর্মীরা বলছেন, এত বেশি রোগী গত ১০ বছরেও তারা দেখেননি। শুধু আগস্ট মাসেই ঢামেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় চার হাজার রোগী। রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে ঢামেকের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের পাঁচতলা থেকে আটতলা পর্যন্ত শুধু রোগী আর রোগী। কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। চিকিৎসকদের কক্ষের দরজার সামনে, চিলেকোঠায়, সিঁড়িতে- যে যেখানে পেরেছেন পাটি বা চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন। কারণ বেড পাওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুস্থ হওয়া।

এদিকে বাড়তি চাপ সামাল দিতে নবনির্মিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেও রোগী স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই একজন-দুজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসতে থাকে। ধীরে ধীরে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িও ফিরে যায় তারা। জানুয়ারি মাসে তিনজন রোগী চিকিৎসা নেয়। মাঝে ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। মার্চে আবার চারজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এপ্রিলে ভর্তি হয় তিনজন এবং মে মাসে ভর্তি হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত আটজন। এরা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে। তবে জুনে এসে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ১৩৫ জন। এর মধ্যে একজন মারা যায়। আর জুলাই থেকে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় দুই হাজার ৪৬৪ জন। এর মধ্যে মারা যায় ৯ জন। কিন্তু আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে ঢামেকে ভর্তি হয় তিন হাজার ৭৫৬ জন।

তবে আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃতের সংখ্যা জানাতে গড়িমসি করছে ঢামেক কর্তৃপক্ষের। তারা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দিয়ে জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মৃত্যুর সংখ্যা জানাবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের নতুন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমলেও নতুন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর অভাব নেই। কয়েকজন নার্স বলেন, রোগী এখন অনেকটাই কম। তবে আগস্টের মতো এত রোগী কখনই দেখেননি তারা।

ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেন যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। রেডক্রিসেন্টের ঢামেক ইউনিট প্রধান মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আগস্টের চার তারিখ থেকে তারা এই হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সেবা দিচ্ছেন। গত মাসে হাসপাতালে পা ফেলার জায়গা ছিল না। সেই চাপ সেপ্টেম্বরে কমেছে। যদিও সেপ্টেম্বরে এডিস মশার উপদ্রব বেশি থাকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোগী বাড়েনি।

কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা শ্রমিক জাবেদ মিয়া জানান, পরিবার নিয়ে তিনি কামরাঙ্গীর চর কয়লাঘাট এলাকায় থাকেন। গত তিন ধরে হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আগের থেকে ভাল আছেন। বাসায় মশারি ব্যবহার করতেন না। এখন থেকে তিনি মশারি ব্যবহার করবেন।

লালবাগ থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। আমিতো বাসায় মশারি ব্যবহার করতাম। কিন্তু কোথা থেকে মশা কামড়ালো বুঝতে পারলাম না।’

এদিকে ঢামেকে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত মাত্র ৩৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলে ৭৩ জন। আর বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৩০০ জন।

ডেঙ্গু নিয়ে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন ‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমেছে। তবে এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চলতি মাসে বৃষ্টি কম থাকায় এডিস মশার উপদ্রব কিছুটা কমেছে। কিন্তু কম-বেশী রোগী প্রতিদিনই আসছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আরও আগে যদি ব্যবস্থা নিত তাহলে রোগী এত বাড়তো না। তাদের উদাসীনতাই এর একমাত্র কারণ। তবে তাদের শিক্ষা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণও অনেক সচেতন হয়েছে। তবে বৃষ্টির শংকা এখনও যায়নি। বৃষ্টি বেশি হলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আবারও বাড়তে পারে। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনকে তৎপর থাকতে হবে।’

আগস্ট চার হাজার টপ নিউজ ডেঙ্গু রোগী ঢামেক রেকর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর