Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঝুলছে খালেদার খাস জমির মালিকানা মামলা, শুনানির জন্য ডিসির আবেদন


৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:২৮

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে  দিনাজপুরের মাতাসাগরের প্রায় ৪৬ একর জমি (বন্দোবস্তের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়া) সংক্রান্ত মামলায় আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করেছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক।

রোববার (৮ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে এসি (ল্যান্ড) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এই আবেদন করেন। আবেদনে ১০ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা এ মামলাটির আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

পরে সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এটা সরকারের সম্পত্তি। সাবেক আইন সচিব (আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক দুলাল) দিনাজপুরের যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অতি দ্রুত সময়ে রায় দিয়ে তাদের দখলে হস্তান্তর করে।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে এই সম্পত্তি নিয়ে মামলা হয় যার রায় হয় ২০০৫ সালে। এত অল্প সময়ে রায় ঘোষণাটি ছিল অনভিপ্রেত। এই রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল হলে মামলার এক্সিবিট (প্রদর্শিত নথিপত্র) নিয়ে গেছে যার কারণে মামলটা রেডি হচ্ছে না। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। কিন্তু শুনানি হচ্ছে না। এ কারণে আজকে দিনাজপুরের ডিসির প্রতিনিধি হিসেবে সেখানকার এসি (ল্যান্ড) এসে দ্রুত সময়ে আপিলটি শুনানির আবেদন করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, দিনাজপুরের মাতাসাগরের প্রায় ৪৬ একর খাসজমি বরাদ্দ হয় খালেদা জিয়ার বাবার মালিকানাধীন দিনাজপুর লাইভস্টক অ্যান্ড পোলট্রি ফার্মের নামে। জিয়াউর রহমানের আমলে বন্দোবস্তের মাধ্যমে বরাদ্দটি নেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার বাবার মৃত্যুর পর তার ভাই, বোন এবং একপর্যায়ে তার মা পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়িক শেয়ার বিক্রি করে দেন। সর্বশেষ ওই পোলট্রি ফার্মের শেয়ারের মালিকানা দাঁড়ায় বিএনপি নেতা চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান ও তার ভাই মিজানুর রহমানের।

২০০৪ সালে খাস জমিটি সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে জানতে পেরে নিজেদের নামে স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে দিনাজপুরের আদালতে মামলা করেন মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান। বিএনপি শাসনামলে ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল ওই জমির স্বত্ব তাদের দুজনের নামে ঘোষণা করে রায় দেন দিনাজপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক সদ্য বিদায়ী আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি আপিল করে সরকার। কিন্তু মামলায় প্রদর্শিত নথি না থাকায় দীর্ঘ প্রায় দশ বছর পর আপিলটির শুনানি শুরু করতে আজ আবেদন করা হয়।

আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বিবাদীপক্ষ (ডিসি অফিস) আপিলটি দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি, কারণ বাদীপক্ষ রায় ঘোষণার পর পরই প্রদর্শিত ডকুমেন্টস নিম্ন আদালত থেকে উঠিয়ে নেয়। বাদীপক্ষ একাধিক নোটিশ গ্রহণ করলেও তারা ওইসব ডকুমেন্টস দাখিল করেনি। বাদীপক্ষ জেনেশুনেই এই আপিল নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব করছে। এ কারণে ওইসব প্রদর্শিত নথি ছাড়াই দ্রুত আপিলটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।

জানা যায়, দিনাজপুরের মাতাসাগর দীঘি দিনাজপুরের মহারাজার সম্পত্তি। পরে জমিটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। দীঘিটি এলএ কেস নং ১৬/২-৭৬-৭৭ মূলে অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় ৪৫.৯৪ একর আয়তনের খাস জমি ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খালেদা জিয়ার বাবার মালিকানাধীন দিনাজপুর লাইভস্টক অ্যান্ড পোলট্রি ফার্মের নামে বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে ১৯৮১ সালের ৪ জুন বন্দোবস্তের আদেশ পান। বন্দোবস্ত নিয়ে খালেদা জিয়ার বাবা এমই মজুমদার ওই ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার মা তৈয়বা মজুমদার পরিচালক হিসেবে ভোগদখল করতে থাকেন। পরে এমই মজুমদার ১৯৮৪ সালে মারা গেলে ওয়ারিশ হিসেবে পুত্র সাঈদ ইস্কান্দার, শামীম ইস্কান্দার, কন্যা খুরশীদ জা

হান হক, বেগম খালেদা জিয়া এবং বেগম শালিনা ইসলামকে রেখে যান। তারা পরে তাদের ব্যবসায়িক শেয়ার তাদের মা তৈয়বা মজুমদারের কাছে বিক্রি করেন।

তৈয়বা মজুমদার বার্ধক্যজনিত ও অসুস্থতার কারণে দিনাজপুর লাইভস্টক অ্যান্ড পোলট্রি ফার্মের সম্পূর্ণ শেয়ার ১৯৮৬ সালের ২৮ জুলাই ফজলুর রহমান ও তার বাবা আরশাদ আলম এবং মোছা. রোকসানা হোসেনের কাছে বিক্রি করেন। পরে আরশাদ আলম ওই ফার্মের পরিচালক থাকাকালে তার ছেলে ফজলুর রহমান পরিচালক ও চেয়ারম্যান, আরেক ছেলে মো. মিজানুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রোকসানা হোসেন ফার্মের পরিচালক থাকা অবস্থায় রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন করে ফার্মের নামে খারিজ করে নেন।

এর পর আরশাদ আলম মারা গেলে তার অন্য ওয়ারিশ ও রোকসানা হোসেন তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেন মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমানের কাছে। ফলে ওই ফার্মের মালিকানা নিয়ে মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান সেখানে ভোগদখল করতে থাকেন। ২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ওই সম্পত্তির খাজনা প্রদান করতে গিয়ে জানতে পারেন, সম্পত্তিটি ওই দুই জনের নামে না হয়ে সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে।

এরপর মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান তাদের নিজেদের নামে ওই জমির স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে দিনাজপুরের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ডিক্রি ঘোষণার মামলা করেন। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল দিনাজপুরের তৎকালীন প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ওই রায় ঘোষণা করেন। এর পর ওই রায় নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া জমি কীভাবে ব্যক্তির নামে স্বত্ব ঘোষণা করা হলো, সে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বর্তমানে ওই জমি দেখাশুনা করছেন মিজানুর রহমান।

খালেদার মামলা টপ নিউজ ডিসি শুনানি হাইকোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর