Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাব-রেজিস্ট্রার বদলিতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়: টিআইবি


৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:১৭

ঢাকা: ভূমি খাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এই খাতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের বদলিতে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। তবে ঢাকার আশপাশের থানাগুলোতে সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলির ক্ষেত্রে কখনো কখনো টাকার অঙ্ক ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি’র কার্যালয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এসব কথা বলেন। এ সময় টিআইবির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন নিহার রঞ্জন রায় ও শাম্মী লাইলা ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবা সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে  টিআইবি। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪১টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সরেজমিনে পরিদর্শন এবং বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্যপ্রমাণসহ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি খাতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি ক্ষেত্রে দুর্নীতি এক প্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই হচ্ছে। সরকারের নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। দলিল নিবন্ধন ও দুর্নীতি একটি আরেকটির পরিপূরক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২০১৭ সালে ভূমি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আমরা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি, গত দুই বছরে তার কোনো উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি খাতে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় যোগসাজশের মাধ্যমে হয়। এর সাথে সাব-রেজিস্ট্রার, সহকারী মোহরার, নকলনবিশ ও দলিল লেখকদের একাংশ জড়িত। অভিযোগ রয়েছে এই অর্থের ৫০ শতাংশ সাব-রেজিস্ট্রার এবং বাকি অর্থ অফিসের সকলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা, দলিলের নকল উত্তোলনে ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, দলিল নিবন্ধনের সময় দলির লেখক সমিতিকে ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দলিল করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। কখনো জমির মূল্য কম দেখিয়ে দলিল করা হয়। এক্ষেত্রে সরকার রাজস্ব হারালেও লাভবান হয় ভূমি অফিসের লোকজন। আবার কখনো ব্যাংকে জমি বন্ধকি রাখতে দলিলে বেশি মূল্য দেখানো হয়। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয় জমির মালিক ও ভূমি অফিসের লোকজন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভূমি অফিসে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে নকলনবিশ হিসাবে নাম তালিকাভুক্ত করতে ২০ হাজার থকে ৩ লাখ টাকা, নকলনবিশ থেকে মোহরার পদে যোগদান ২ লাখ থেকে ৮ লাখ, মোহরারার থেকে সহকারী পদে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা, দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে এক থেকে তিন লাখ টাকা, দলিল লেখকদের দলিল লেখক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্তি করতে ২ থেকে ৩ লাখ এবং সাব-রেজিস্ট্রারের বদলির ক্ষেত্রে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে ১৫টি সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভূমিখাতে ডিজিটালাইজেশন, বদলির ক্ষেত্রে প্রভাবমুক্ত করা ইত্যাদি।

টিআইবি ভূমি খাত সাব রেজিস্ট্রার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর