পুঁজিবাজারে ১ মাসে মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৫
ঢাকা: পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। টানা দরপতনের পর মাঝে দুয়েকদিন সূচক টেনে তোলা হলেও তা ধরা রাখা যাচ্ছে না। সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ এক মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৯০৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিরূপ প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মনিটরিং কঠোর না হওয়ায় পুঁজিবাজারে নানাধরনের কারসাজি হচ্ছে। এতে করে এক শ্রেণির গেইমলার কারসাজির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে মোটা অংকের মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আর এই কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি তাদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাজারে দরপতন হচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাত ভালো থাকলে পুঁজিবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংক নানা সংকটে রয়েছে। এই সংকটের অন্যতম কারণ হলো খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের কারণে সরকারি-বেসরকারি অনেক ব্যাংক মূলধন সংকটের মুখে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিকখাতে বিভিন্ন সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে অনস্থা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকখাতের খেলাপিঋণ ও তারল্য সংকট দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। সম্প্রতি পিপলস লিজিং অবসায়নের খবরে পতনের মাত্রা আরও বেড়েছে।’
অন্যদিকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আস্থার সংকট। এই সংকটের কারণে বাজারে নতুনি বিনিয়োগকারী তেমন আসছে না। পুরনো বিনিয়োগকারীরাও লোকসানের কারণে লেনদেন করছে না। ফলে বাজারে প্রতিনিয়ত দরপতন হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপিঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।’
এক মাসে ডিএসইর সূচকের পাশাপাশি বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা
অব্যাহত দরপতনের কারণে গত এক মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। গত ৮ আগস্ট ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজর ২০১ পয়েন্ট। অব্যাহত দরপতনে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইর বাজারমূলধন ১১ হাজার ৯০৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কমে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকায় নেমে আসে। একই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৯৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সর্বশেষ লেনদেন হওয়া ১৮ কার্যদিবসের মধ্যে ১১ দিন শেয়ারের দাম কমেছে এবং বেড়েছে ৭ দিন।