Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ৮ মাসে ১৬ শ্রমিকের মৃত্যু


১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে চলতি বছরের ৮ মাসে ১৬ শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ‘জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম’। শ্রমিকের প্রাণহানি মোকাবিলা করে কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে ১০ দফা দাবি দিয়েছে সংগঠনটি। সাতদিনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শফর আলী।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বঙ্গোপসাগর উপকূলে ১৫০টির বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের নিবন্ধন আছে। কিন্তু কাজ চলছে ৫০-৬০টি ইয়ার্ডে। এসব কারখানায় সরাসরি কাজ করে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ না থাকায় প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৬৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনবছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন। আর ২০১৯ সালের গত ৮ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন ও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ৩০ জন।

২০১৯ সালে নিহতদের মধ্যে জাহাজ কাটার সময় আগুনে দগ্ধ ও গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। লোহার পাত চাপা পড়ে মারা গেছেন ৫ জন।

শফর আলী বলেন, ‘২০১৯ সালে শ্রমিকের মৃত্যু অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। একজন শ্রমিকের মৃত্যুর দায়ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিকেরা এড়াতে পারেন না। অথচ মালিকদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকরা মৃত্যুর শিকার হলেও এবং ক্রমাগতভাবে তা বাড়তে থাকলেও দায়ী মালিকের বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো ‍হুলিয়া জারি হয়নি। দুর্বল, নিপীড়িত, অসহায় জনগোষ্ঠীর প্রতি কি রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই?’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অনেক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের লাইসেন্সও নেয়নি। ঝুঁকি নিরসনে তাদের কোনো পদক্ষেপই নেই। এছাড়া অধিকাংশ শ্রমিকের জাহাজ কাটা ছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শ্রমিকদের আত্মরক্ষার জন্য কোনো সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকরা বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা এবং জেলা প্রশাসকের গঠিত ক্রাইসিস কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংগঠনটির নেতাদের।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও আহতদের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ইয়ার্ড মালিকদের উদ্যোগে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া, শ্রমিকদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ, কাটার আগে জাহাজকে সম্পূর্ণভাবে বর্জ্যমুক্ত করা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকা ও দৈনিক ৬১৫ টাকা নিশ্চিত করা এবং এ-যাবৎ সংঘটিত সকল দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে উদঘাটন ও দায়ী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

সাতদিনের মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়া না হলে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের আহ্বায়ক তপন দত্ত ও যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন।

৮ মাসে ১৬ শ্রমিকের মৃত্যু চট্টগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর