ভৈরব: অসতর্কতাবশত একটি কাচেঁর চুরি ভেঙে ফেলেছিল গৃহকর্মী সাদিয়া (১৮)। আর তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সে। রীতিমতো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তার চোখে। শরীরে ঢেলে দেওয়া হয়েছে গরম পানি।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভৈরবের বাতাশাপট্টি এলাকার একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতক দুজন হলেন তানভীর রাফসান সাদলি ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা অপি।
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে অভিযুক্ত দম্পত্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এছাড়া নির্যাতিত সাদিয়াকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন সাদিয়া জানায়, সোমবার বিকেলে বাসার ওয়্যারড্রব পরিষ্কার করার সময় অসতর্কতাবশত তার হাতের ধাক্কায় মেহেরুন্নেসা অপির চুড়ির আলনাটি মেঝেতে পড়ে যায়। এতে কাচেঁর চুড়ি ভেঙে যায়। এতে তার উপর চড়াও হন গৃহকর্তী অপি। প্রথমে লাঠি দিয়ে সাদিয়াকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর ছরি দিয়ে চোখের ওপরের অংশে আঘাত করা হয়। লাঠিপেটা করে ক্লান্ত হয়ে যান অপি। তখন সাদিয়ার শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন তিনি।
পরে চুড়ি ভাঙার খবর পেয়ে গৃহকর্তা তানভীর রাফসান সাদলিও সাদিয়াকে কিছুক্ষণ লাঠিপেটা করেন। এসময় নিজের প্রাণ বাঁচাতে কোনোরকমে ওই বাসা থেকে দৌড়ে পালায় সাদিয়া। পরে কয়েকজন পথচারীর সহায়তায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাকে।
সাদিয়া ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার কাকনি গ্রামের বাসিন্দা। জন্মের কিছুদিন পরেই তার বাবা-মা মারা যান। পরে দুঃসম্পর্কের এক খালার কাছে বেড়ে ওঠে সে। ১১ বছর বয়সে সাদিয়াকে ভৈরবে সাদলি-অপি দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠান তার খালা রেহেনা বেগম। প্রথমদিকে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও গত দুই বছর ধরে সাদিয়ার ওপর চলে নির্মম অত্যাচার। সামান্য ঘটনাতেই লাঠিপেটাসহ গরম পানির ঢেলে দেওয়ার মতো নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ করে সাদিয়া।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফেরদৌস হায়দার জানান, সাদিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।