Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্ত্রীসহ ৫ জনের প্ররোচনায় শিরায় বিষপ্রয়োগে ডাক্তারের আত্মহত্যা’


১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিরায় বিষপ্রয়োগ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩২) আত্মহত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। তদন্তে স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আকাশকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে তাদের অভিযোগপত্রে আসামি করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে- আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, মা মোছাম্মৎ শামীমা শেলী, বোন সানজিলা হক চৌধুরী ও মিতুর কথিত বন্ধু চিকিৎসক মাহবুবুল আলমকে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অভিযোগপত্রটি প্রসিকিউশন শাখায় জমা পড়েছে। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি ছিল। আজ (বুধবার) আমরা সেটি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠিয়েছি। সেখানে অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির সময় নির্ধারিত হবে।’

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ভোরে নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন চিকিৎসক আকাশ। আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ (অ্যানেসথেশিস্ট) বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মৃত্যুর আগে ভোর ৫টার দিকে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ফেসবুক পেজে দু’টি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। সেখানে আকাশ জানান, ২০০৯ সালে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সঙ্গে পরিচয়ের পর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে ‘চিটার’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও করেন। শেষ স্ট্যাটাসে মোস্তফা মোরশেদ আকাশ স্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি দেন এবং লিখেন, ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।’

এই ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আকাশের মা জোবেদা খানম বাদি হয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে অভিযোগপত্রভুক্ত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুল কাদের।

এজাহারভুক্ত আসামি আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক প্যাটেলকে অভিযোগপত্রে বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামি প্যাটেল যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় এবং তিনি বাংলাদেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত না করায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছিল, আকাশের সঙ্গে বিয়ের আগে মিতুর সম্পর্ক ছিল মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। বিয়ের পর আমেরিকায় গিয়ে সম্পর্কে জড়ান প্যাটেলের সঙ্গে। আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে আকাশকে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হতে বাধ্য করে।

সূত্রমতে, অভিযোগপত্রে মিতুর বিয়েবর্হিভূত সম্পর্ক এবং স্বামী আকাশকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ আছে। এতে আরও উল্লেখ আছে, ২০১৬ সালে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পরপরই মিতু অমেরিকা চলে যান। তখন থেকে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশের আসার পর তা আরও বেড়ে যায়। ৩০ জানুয়ারি রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতি হয়। সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ এলাকায়। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডে মিতুর বাবার বাসা।

আকাশের মৃত্যুর পর নগরীর নন্দনকানন এলাকায় নিকটাত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনরত অবস্থা থেকে মিতুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।

বাকি আসামিরা মামলা দায়েরের পর পলাতক আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

মৃত আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। নগরীর চান্দগাঁও থানার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে তাদের পরিবারের বসবাস।

তানজিলা হক চৌধুরী মিতু প্ররোচনায় আত্মহত্যা মোস্তফা মোরশেদ আকাশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর