খালেদা নির্বাচন করতে পারবেন যদি…
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:৪৫
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: বহুল আলোচিত জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খাটছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জেলে যাওয়ার পর থেকেই তার জামিনের জন্য আপিল দায়েরের তোড়জোড় শুরু করেছেন তার আইনজীবীরা।
এদিকে খালেদা জিয়া পাঁচ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও আইনজীবীরা পক্ষে বিপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকলে ওই ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না।’
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারও সাজা হয় তাহলে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দু’টি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত বলা আছে যে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি, সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও নির্বাচন করতে পারবেন। আবার ভিন্ন আরেকটা রায়ে আছে, পারবেন না। এখন ওনার (খালেদা জিয়া) ব্যাপারে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেবেন এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দুই বছরের বেশি সাজা হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল দায়ের করলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে যদি নিম্ন আদালতের সাজা বহাল থেকে যায় তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, এ অবস্থায় তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে আপিলে যদি সাজা কমে বা ভিন্ন কোনো আদেশ থাকে তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া।
কারণ নিম্ন আদালতের রায়ের পর হাইকোর্ট হয়ে আপিল পর্যন্ত ফাইনাল রায় হতে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ যদি নির্বাচন হয় তাহলে এ নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা হবে না বলে মনে করেন বিএনপিপন্থী এ আইনজীবী।
এ সময় উদাহরন দিয়ে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে সাজা হওয়ার পরও মহিউদ্দিন খান আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল ছিলেন। তাহলে খালেদা জিয়া কেন পারবে না।
নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ের অনুলিপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপিল দায়ের করা হবে বলেও জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া রায় বাতিল ও জামিন চেয়ে আপিল করতে জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন তার আইনজীবী। ইতোমধ্যে আপিলের জন্য ফাইল ড্রাফটিং এবং যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ করে রেখেছেন। এখন শুধু রায়ের সার্টিফাইড (অনুলিপি) কপির জন্য অপেক্ষা করছেন বলে আইনজীবী সূত্রে জানা যায়।
গতকাল রায় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাইল প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। শুক্রবারও তারা এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন, আপিল দায়েরের জন্য অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী কাজ করছেন বলে জানা যায়।
এ মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গতকাল রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সার্টিফাইট কপি চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি রোববার কোর্ট খুললে সার্টিফাইড কপি পাওয়া যাবে। আর কপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপিলের ফাইল করা হবে। তাতে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হবে বলেও তিনি জানান।
৬৩২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায় দেখার পর সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত নিয়ে আপিল দায়ের করা হবে বলেও জানান এ আইনজীবী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড দেন একই সঙ্গে অর্থদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পরই তাকে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ