Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন করা হয়


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৮:৪০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ গ্রামবাসী মিলে রাখাইন অঞ্চলে দশজন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করে। এ ঘটনা অনুসন্ধানের কারণে মিয়ানমারের নাগরিক রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে দুমাসেরও অধিক সময় ধরে আটকে রেখেছে সে দেশের সরকার।

প্রথমবারের মতো রয়টার্স স্বীকার করেছে, মিয়ানমারের নাগরিক রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও সোয়ে য়ুকে গত বছরের ১২ ডিসেম্বরে ইয়াঙ্গুনের বাইরে কর্তব্যরত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সেখানে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একসঙ্গে বেঁধে রাখা ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিম তাকিয়ে দেখছিল তাদের প্রতিবেশি বৌদ্ধরা কবর খঁড়ছে তাদেরই জন্য। এরপর ২ সেপ্টেম্বর সকালে সেই ১০ জনকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্তত দুজনকে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। বাকিদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে হত্য করে, বলে জানিয়েছেন কবর খননকারী দলের দুজন সদস্য।’

 

 

একটি কবর থেকে দশ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান, সোয়ে চে নামের একজন সাবেক গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। তিনি কবর খঁড়তে ও তাদের হত্যা করতেও দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

সাবেক ওই সদস্য আরও জানায়, সেনাবাহিনী প্রত্যেক রোহিঙ্গা মুসলিমকে দুই-তিনটি করে গুলি করে হত্যা করে। যখন তাদের কবর দেওয়া হয়, সে সময়ও কয়েক জন শব্দ করতে থাকে বলেও জানান তিনি।

 

 

রয়টার্সের সরবরাহ করা ছবি দেখে নিহত ব্যক্তিদের চিনতে পেরেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিহত ব্যক্তিদের পরিবার।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে আছে,  আবুল হাসিম (২৫), আব্দুল মালিক (৩০), নূর মোহাম্মদ (২৯), রশিদ আহমেদ (১৮), হাবিজু  (৪০), আবুলু (১৭), শাকের আহমেদ (৪৫), আব্দুল মজিদ (৪৫), শকিত উল্লাহ (৩৫) ও দিল মোহাম্মদ (৩৫)।

নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছে জেলে, মুদি দোকানদার, দুই কিশোর ছাত্র ও একজন ইসলামী শিক্ষক।

তা ছাড়াও ওই প্রতিবেদনে ছাপা ছবিতে দেখা গেছে দশ জনকে পেছন দিকে হাত বেঁধে হাঁটুগেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরে তাদের হত্যা করা হয়।

আব্দস শাকুর নামের একজন নিহত রোহিঙ্গার পিতা রয়টার্সকে জানান, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বলা হয়েছিল, ভয় পাবেন না। তাদের একটি মিটিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মিটিং শেষে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

 

 

রাখাইন রাজ্যের ইন ডিন অঞ্চলের একজন সাবেক গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্য এবং ওই ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যের বক্তব্যের সূত্র ধরেই মূলত প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ইন ডিন অঞ্চলের উপকূলীয় গ্রামটি আরেকটি রক্তক্ষয়ী জাতিগত সংঘাত প্রত্যক্ষ করল। সংঘাতটি মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তরের দিকেও ছড়িয়ে পড়েছে। আগস্ট মাস থেকে গ্রামটির দেশটির প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এ ছাড়াও ওই প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে ইন ডিনের ৬ হাজার রোহিঙ্গা বাসিন্দাদের সবাই গ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গারা সে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্দে তাদের ঘর-বাড়িতে আগুণ দেওয়া, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ করেছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রুও এই ঘটনাকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। মিয়ানমার সরকার এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ বলে দাবি করে জানিয়েছে, এটা রোহিঙ্গা অভ্যুত্থান বন্ধে আইনসঙ্গত অভিযান।

বিজ্ঞাপন

 

মিয়ানমারের জঙ্গল থেকে ‍উদ্ধার করা নিহত রোহিঙ্গাদের কঙ্কাল

তবে সাংবাদিক আটকের একমাস পর মিয়ানমার সরকার এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে, ১০জন রোহিঙ্গাকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সামরিকবাহিনী জড়িত ছিল।

রোহিঙ্গারা এক শতাব্দী আগে থেকে মিয়ামারে বসবাস করে আসলেও অধিকাংশ বার্মিজ জনগণ মনে করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় নেওয়া অভিবাসী। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও তাদেরকে বাঙালী বলে উল্লেখ করে।

 

রয়টার্স সাংবাদিক

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে সেই ঘটনার পর কিভাবে দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার করতে মিয়ানমারের পুলিশ বাহিনী কি পরিমানে তৎপর হয়ে পড়ে।

 

রয়টার্স সাংবাদিক

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং কূটনীতিবিদদের আবেদন সত্ত্বেও তাকে জামিন দিতে অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।

অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের অধিনে এই দুই সাংবাদিকের এখন ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।

সারাবাংলা/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর