Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা নিলে চাপে পড়বে আর্থিক খাত


১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:২৫

ঢাকা: বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও করপোরেশনের উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নেওয়া হলে ব্যাংক, পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, হঠাৎ করে এসব প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভে থাকা অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়া হলে ওইসব প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।

কারণ হিসেবে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃদ্ধ অর্থের একটা বড় অংশ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে রয়েছে। এই টাকা ব্যাংক খাত থেকে চলে গেলে তারল্য সংকট দেখা দেবে। অন্যদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে সব প্রতিষ্ঠানে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ছিল সেখান থেকে টাকাগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এইসব টাকা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ না, এটাকে আমরা বলি, রিজার্ভ ফান্ড বা সংরক্ষিত তহবিল। এই তহবিল থেকে ভবিষ্যতে কোম্পানির বিভিন্ন জিনিসে যে অবচয় হয়, যেমন একটি গাড়ি কিংবা বিল্ডিং ব্যবহার হতে হতে এক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন এগুলো ঠিক করতে টাকা লাগবে। আবার কোম্পানি প্রয়োজনে বর্ধিত করতে কিংবা নতুন ভবন নির্মাণ করার প্রয়োজন হলে এই টাকা থেকে খরচ করা হয়। এইসব কারণে এই ফান্ডগুলো রাখা হয়। সরকার এসব ফান্ড নিয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, ব্যাংক কিংবা শেয়ার মার্কেটে বিরুপ প্রভাব পড়বে কিনা এটা গুরুত্বপূর্ণ না। কারণ ব্যাংকের টাকা আসবে যাবে, এটা নিয়মিত একটি প্রক্রিয়া। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কারণ, এসব টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করে। ফলে হঠাৎ করে সব টাকা নিয়ে নিলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরো চাপে পড়বে। ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার হুট করে এসব প্রতিষ্ঠানের সব টাকা নিয়ে নেবে তা হয় না। আবার প্রতিষ্ঠানগুলো বিনা প্রয়োজনে এসব টাকা রেখে দিবে সেটাও উচিত হবে না। তবে দেখতে হবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা চলে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)‘র সাবেক সভাপতি মো: রকিবুর রহমান সারাবাংলা বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার সময় তাদের রিজার্ভের অর্থ দেখানো হয়েছে। যেমন তিতাসের মতো ইজিএম না করে, শেয়ারহোল্ডাদের সাথে কথা না বলে এবং বিএসইসির অনুমতি না নিয়ে রিজার্ভের টাকা কিভাবে নেওয়া হবে? তালিকাভুক্ত কোম্পানির আইন না মেনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানির রিজার্ভের টাকা নেওয়া হলে পুঁজিবাজার বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন এই বাজারের প্রতি কারো আস্থা থাকবে না। দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তারা বাজার বিমুখ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, এটা করার আগে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। সরকারের যদি এতই টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারি ভালো কোম্পানিগুলো পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারে ছেড়ে সেখান থেকে অর্থ নিতে পারতো।

সরকারি ৬৮ প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা

বর্তমানে সরকারি ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিজার্ভের পরিমাণ ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানে রিজার্ভ আছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, পিডিবিতে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ হাজার ৯১৩ কোটি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। নতুন আইনের ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ বাৎসরিক ব্যয় রেখে বাকি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। সরকার এই অর্থ উন্নয়ন কাজে খরচ করবে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ প্রতিষ্ঠান

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সরকারি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অধীনে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল। পেট্রোবাংলার আওতাধীন তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রনিক সাপ্লাই কোম্পানি। এছাড়াও রয়েছে, রেইন উইক যজ্ঞেশ্বর, ন্যাশনাল টিউব, রূপালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ক্যাবল, আইসিবি, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, উসমানিয়া গ্লাস, বাংলাদেশ সার্ভিস, এটলাস বাংলাদেশ, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পনির আয় কমবে

বিভিন্ন করপোরেশনের উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নেওয়া হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের আয় কমে যাবে বলেও বিনিয়োগকারীদের অভিমত। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। এফডিআর থেকে সুদ বাবদ পাওয়া অর্থ কোম্পানির আয় হিসাবে দেখানো হয়। এতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বাড়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলে এসব প্রতিষ্ঠানের আয় ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ কমে যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারি সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন ২০১৯’র খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আইনে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। আইনটি বাস্তবায়ন হলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা রিজার্ভের অর্থ এতদিন নিজেরা রাখতে পারলেও এখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। অর্থ্যাৎ বর্তমানে ৬৮টি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর