Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় ৪ মাসেও কোনো অগ্রগতি নেই


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:৩৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়াই হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ প্রক্রিয়া শুরুর পর এরই মধ্যে কেটে গেছে চার মাস। যদিও ১৭ এপ্রিল ভবনটি ভাঙা ও এর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে রাজউক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মালামাল ক্রয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়ে ভবন ভাঙার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।

রাজউক বলছে, প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া পরিকল্পনা যাচাই-বাছাই চলছে। এ মাসেই শুরু হতে পারে ভবন ভাঙার দ্বিতীয় প্রক্রিয়া। শিগগিরই দেওয়া হতে পারে কার্যাদেশ।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দরপত্র আহ্বান করেছিলাম। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। ফিজিক্যালি কোনো অগ্রগতি না থাকলেও আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মালামাল ক্রয়ের সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানই সনাতন পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার কার্যাদেশ পাবে। তবে ডিনামাইট ব্যবহার করে আর ভবন ভাঙা হবে না।’

এদিকে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে কোনো অর্থ দেবে না রাজউক। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মালামাল কেনার জন্য সর্বোচ্চ দাম উল্লেখ করবে রাজউক তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে ভবন ভাঙার কার্যাদেশ দেবে।

ভবন ভাঙতে দরপত্রে অংশ নিয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মালামাল ক্রয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভবন ভাঙার কার্যাদেশ পেতে মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পিএনএস এন্টারপ্রাইজ ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এক কোটি টাকা, ফোর স্টার এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামিরা এন্টারপ্রাইজ ৩০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব দিয়েছে।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় ভবনে থাকা মালামালা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওইদিনই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে আবারও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটিতে থেকে যাওয়া মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয় রাজউক। এর পর কেটে গেছে প্রায় চার মাস। কিন্তু এখনও ভবন ভাঙতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

অবশেষে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু

গত ২১ জুলাই রায়হানুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা এখনও প্রোজেকশন (প্রাক্কলন) করছি। আশা করি শিগগিরই এই প্রোজেকশন শেষ হবে। আমরা দরপত্র আহ্বান করেছিলাম। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা অফিসিয়ালি কস্ট অ্যাসেসমেন্ট করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা এই সপ্তাহেই রিপোর্ট দেবে বলে আশা করছি। ওই রিপোর্ট পেলেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

সর্বশেষ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রায়হানুল ফেরদৌস জানান, ভবন ভাঙতে এরই মধ্যে পুরো প্রাক্কলন শেষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হবে।

ভবন ভাঙায় বিলম্ব প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে রাজউকের এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘হ্যাঁ চার মাস কেটে গেছে, কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত ছিল। আমরা অফিসিয়ালি কস্ট অ্যাসেসমেন্টও করতে পারিনি। মে মাস থেকে আমরা ভবনটি ফ্রি পেয়েছি। তখন থেকে আমরা ভবনে গিয়ে মাপজোখ করতে পেরেছি। এই কারণেই সময় লেগেছে।’

এর আগে কাজের ধীরগতির বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভবন ভাঙার কাজটি রাজউকের। বিষয়টি তারাই দেখছে।’ এবিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলে ধারণা করছে রাজউক। আর ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে খরচ মেটাতে না পারলে ওই টাকা বিজিএমইএ’র কাছ থেকেই নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী। কিন্তু ওই বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেনি রাজউক।

চলতি বছরের মে মাসে রায়হানুল ফেরদৌস সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পুরো ভবনটি ভাঙতে হবে। এ জন্য তারা আলাদা কোনো অর্থ পাবে না। দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে তারা তাদের খরচ ও লাভ উঠিয়ে নেবে।

আর ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের রায়ে সুনির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেওয়া নেই বলে জানিয়েছেন রাজউকের আরেক কর্মকর্তা।

অপরদিকে ভবনটি না ভাঙার পক্ষে এখনও ‘অপ্রকাশ্য জোর দাবি’ রয়েছে বিজিএমইএ-এর অনেক নেতার। পোশাকখাতের অনেক নেতাই মনে করেন, ভবনটি না ভেঙে এর নিচতলা অপসারণ করে জনস্বার্থমূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তৈরি পোশাকখাতের শ্রমিকদের জন্য ভবনটিতে হাসপাতাল নির্মাণ বা পুরো ভবনটিই শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে দান করা যেতে পারে। তবে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি বিজিএমইএ’র কোনো নেতা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন নিয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। সময় মতো হয়তো সেটি ভাঙা হবে। তবে এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য থাকার কথা নয়।’এক প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন জায়গায় উঠেছি। সেখানে অফিস করছি। উত্তরার ওই ভবনে যাতায়াতে এখনও সমস্যা রয়েছে।’

এদিকে জানা গেছে, গুলশানে বিজিএমইএ’র স্যাটেলাইট অফিস করার পরিকল্পনা চলছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পুরানো অফিসেই স্যাটেলাইট অফিস করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আমরা ছোট অফিস করার চেষ্টা করছি। মূলত গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেই এ পরিকল্পনা। তবে গুলশানে অফিস করার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

বর্তমানে উত্তরায় নির্মাণ হচ্ছে বিজিএমইএ’র নতুন কমপ্লেক্স। ১৩তলা ভবনটির ছয়তলার নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে বিজিএমইএ।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনটি হাইকোর্ট নজরে নিয়ে ‘ভবনটি কেন ভাঙা হবে না?- তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে রায় দেন। এরপর আপিল ও রিভিউয়ে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে দফায় দফায় সময় প্রার্থনা করে বিজিএমইএ।

গত বছরের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে এক বছরের সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয় এ বছরের ১২ এপ্রিল। পরে ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বিজিএমইএ ভবন ভাঙা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর