Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৃষ্টিতে কাজ করে না মশার ওষুধ, ব্যক্তি উদ্যোগে সুরক্ষার পরামর্শ


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৪৮

এই সেই মশা

মাহবুব অর রশীদ বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তার বাস রাজধানীর পশ্চিম শ্যাওড়াপাড়া এলাকায়। বাসায় যেহেতু ছোট বাচ্চা আছে, তাই এখন তার পরিবারের মূল দুশ্চিন্তার বিষয় এডিস মশা। নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেন পরিবারটির সদস্যরা। সেইসঙ্গে মশানিরোধী ক্রিম, কাপড়ে লাগানোর মশার ওষুধ ব্যবহার করে নিজেদের ও সন্তানকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করেন তারা। নিজেদের ঘরে মশার ওষুধ স্প্রে করা, সারাক্ষণ মশা মারার ওষুধ ভর্তি যন্ত্র চালিয়ে রাখাসহ হেন সাবধানতা নেই তারা পালন করেন না।

এরই মধ্যে গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে মাহবুব বাড়ি ফিরে বাসায় মশার ওড়াউড়ি দেখতে পান। কয়েকটি মশা হাতেই মারেন তিনি। এর মধ্যে অন্তত দু’টি মশা দেখে তার সন্দেহ হয়, এগুলো এডিস মশা। সেগুলোর ছবি তুলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, সেই সন্দেহই সঠিক। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পরিবারের সবাই। আবার শুরু হয় ঘরজুড়ে অ্যারোসল স্প্রে করা, সন্তানের গায়ে ওষুধ মাখিয়ে দেওয়া।

তবে পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে আবারও বাসায় কয়েকটি ‘এডিস মশা’ দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন মাহবুব। প্রতিকার খুঁজতে প্রথমেই তার মনে আসে জাতীয় হেল্প লাইন ৯৯৯-এর কথা। সেখানে টেলিফোন করে সমস্যার কথা জানান তিনি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তারা ০২-৫৫০৫২০৮৪ এই নম্বরে টেলিফোন করতে বললেন, যেটি আসলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নম্বর। সেখানে ফোন করা হলে ডা. ফিরোজ আলম নামে একজনের টেলিফোন নম্বর দেওয়া হয়। তাকে ফোন করে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তিনি মাহবুবের ঠিকানা নেন এবং জানান, মশা মারতে লোক পাঠানো হবে।

ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডা. ফিরোজ আলম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪-এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সিটি করপোরেশন থেকে মাহবুবকে টেলিফোন করেন একজন। ০১৭১১৯০২১৪৪ নম্বর থেকে আসা ওই টেলিফোনে বাসার ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। জানানো হয় লোক পাঠানো হবে। তবে সন্ধ্যা নাগাদ কেউ না যাওয়ায় এই নম্বরে টেলিফোন করেন মাহবুব। হাশেম নামের ওই ব্যক্তি জানান, বৃষ্টির মধ্যে হ্যান্ড স্প্রে বা ফগার মেশিন ব্যবহার করা যায় না। এজন্য লোক পাঠাতে পারছেন না।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মাহবুব আবার টেলিফোন করে হাশেমকে। তিনি আবারও একই কথা জানান যে, বৃষ্টি চললে তাদের কিছুই করার নেই। অর্থাৎ বৃষ্টির মধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষে কোনো ওষুধই ব্যবহার করা সম্ভব না।

এ বিষয়ে জানতে সকালে সারাবাংলার কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মমিনুল রহমান মামুনের সঙ্গে। তিনি জানান, বৃষ্টির মধ্যে ফগার মেশিন ব্যবহার করে কোনো লাভ হয় না। এছাড়া হ্যান্ড স্প্রে মূলত ব্যবহার করা হয় যেখানে মশা জন্ম নিয়েছে বা বাস করছে সেখানে। কিন্তু বৃষ্টি হলে প্রবাহমান পানিতে সেটা ব্যবহার করেও লাভ হয় না। কারণ বৃষ্টির পানিতে ওষুধ ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টি চলাকালে তারা ওষুধ ব্যবহার বন্ধ রাখেন।

যদি টানা বৃষ্টি হয় তাহলে ওষুধ ব্যবহার না করলে মশার বিস্তার বেড়ে যাবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মমিনুল রহমান বলেন, ‘এক্ষেত্রে আসলে পারসোনাল প্রোটেকশনে চলতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাড়িতে মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে। বাড়ির আশপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। নিজেদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।’

অর্থাৎ বৃষ্টির মৌসুমে নগরবাসীর নিজের সচেতনতাটাই সবচেয়ে জরুরি বিষয়। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে আবারও ওষুধ ছিটানো হবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা। এছাড়া নির্দিষ্ট করে কোথাও মশার উৎস বা আবর্জনা জমতে দেখলে তা সিটি করপোরেশনকে জানাতেও অনুরোধ করেন তিনি।

ডিএনসিসির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সারাবাংলাকে আরও বলেন, রাজধানীর ৩৬টি ওয়ার্ডে তারা একযোগে কাজ করছেন। যেহেতু এখন মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে তাই ব্যবহারকারীর সংখ্যাও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে। এখন একটি ওয়ার্ডে ১০ জন মানুষ কেবল কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ করেন। ১০ জন নিয়োজিত আছেন বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের কাজে। এছাড়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও চিরুনি অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

এডিস নিয়ন্ত্রণে এখন আর সাময়িক বা সিজনাল কোনো কাজ নয়, বরং বছরব্যাপী কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এজন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকদিনের মধ্যেই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে সবস্তরের মানুষের সমান সচেতনতা ও অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন মমিনুল রহমান। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ের পরিচ্ছন্নতা ছাড়া এডিস নির্মূল সম্ভব নয়। তবে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। ধীরে ধীরে এই সমস্যর সমাধান করা যাবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।

এডিস নিধন এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর