বাজারে শীতের আগাম সবজি, দাম চড়া
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:২৫
ঢাকা: ঢাকার কাঁচাবাজারে পণ্যের যোগান বেশি থাকলেও দাম রয়েছে বাড়তির দিকে। বিশেষ করে সবজি ও মাছের বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে অস্থিরতা। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে গ্রামীণ সবজির প্রায় সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে। মাছের দামও বেশি হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
ঢাকার পাশের গাজীপুর, নরসিংদী, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে আসতে শুরু করেছে শীতের আগাম সবজি। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে এসব সবজির দাম কিছুটা বেশি রাখা হচ্ছে। এই তিন বাজারে লাউ, টমেটো, করলা, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়সও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।
শীতের আগাম সবজির মধ্যে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার বিক্রি অনেক বেশি। শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে এখনো শিমের বিচি পাওয়া যাচ্ছে না। ফুলকপি ছোটগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকায় এবং বড়গুলো ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। বাঁধাকপিও একই দামে কিনছেন ক্রেতারা। মুলার দাম বাজার ভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়াও, শসা ২০ থেকে ৩০ টাকা, কচুর লতি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা, আঁটি লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কুমড়ার শাক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা কবীর মিয়া বলেন, ‘শীতের আগাম সবজি বাজারে এলেও এর চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে দামও চড়া। দাম কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। পাইকারদের কাছেই এসব সবজির দাম অনেক বেশি। এসব সবজি সংরক্ষণের জন্যও খরচ করতে হয়। এজন্য খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বাড়তি।’
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একই বাজারের পাইকার রশিদ বলেন, ‘আমরা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে খুচরা বাজারে বেচি। কৃষকরা খুব বেশি দাম রাখছেন সেটা বলবো না। তবে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে। ঢাকায় আসার প্রতিটি রাস্তায় আমাদেরকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। সেতুতে টোল আছে। স্বাভাবতই ঢাকায় এসে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আমাদেরকে বেশি দামে বেচতে হয়।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাকা টমেটো সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। করলার কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতিটি ৪০ টাকা, লাউ আকৃতি ভেদে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম গত সপ্তাহেও একইরকম ছিল বলে দাবী করেছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিটি পণ্যের দাম পাঁচ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ভাদ্র মাসেও দেশের নদী নালায় প্রচুর পানি থাকায় মাছের বাজারে দেশীয় মাছের যোগান রয়েছে প্রচুর। তবে বাইম, পুটি, টেংড়া, দেশি কই মাছ বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে। এসব মাছের কেজি হাজার টাকারও বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে চাষের মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। চাষের মাছের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের কার্প জাতীয় মাছ, পাঙ্গাস, কই, তেলাপিয়া ও রুই।
হাতিরপুলের মাছের বাজারে তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, মাগুর ১৮০-২০০ টাকা, সুরমা ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০ টাকা, রুই ৩০০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা, কোরাল ৪৫০-৯০০ টাকা, ছোট ইলিশ ৬৫০-৮০০ টাকা, বড় ইলিশ ১২০০-১৫০০ টাকা এবং প্রতি কেজি রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সাদা বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। আর লাল লেয়ার মুরগি আগের মত ২০০-২১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংশ হাড়সহ ৫৫০ এবং হাড় ছাড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ৭২০ থেকে ৭৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজিতে, দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা এবং বিদেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজন ১০০ থেকে ১১০ টাকা।
হাতিরপুল বাজারে ক্রেতা আব্দুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, অনেকে বলছেন দাম ঠিক আছে, অনেকে বলছেন বেশি। তবে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য এই দাম আসলে বেশিই। খেয়ে-পরে একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। পণ্যের দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব। এরজন্য ক্রেতা বিক্রেতার বাইরেও যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন তাদেরকে আরও বেশি লাভের চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।