Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগ: আড্ডা-গল্পে স্মৃতির ক্যাম্পাসে ফেরা


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:১৭

ঢাকা: শত কর্মব্যস্ততা ভুলে স্মৃতি রোমন্থনে পুরো একটি দিন আনন্দের ভেলায় ভাসলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা। সহপাঠীদের সঙ্গে তারা মাতলেন আড্ডা আর স্মৃতি রোমন্থনে। প্রাণের বন্ধনে একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে প্রত্যেকেই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন হারানো দিনগুলোতে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) টিএসসিতে ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মিলনমেলার উদ্বোধন করেন সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন।

বিজ্ঞাপন

অ্যালামনাইয়ে দীর্ঘদিন পর প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সহপাঠীদের সান্নিধ্যে এসে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষাজীবনে ফিরে যান।

মিলনমেলা উপলক্ষে টিএসসির প্রাঙ্গণে ঢুকতেই লেখা ছিল ‘১০৮৮’। এই ১০৮৮ হলো কলাভবনে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে প্রিয় কক্ষ। এছাড়া লেখা ছিল ‘দোস্ত চল টিএসসি যাই’, ‘রেজা ভাই নোট আছে’, ‘মজিদ ভাই অফিসে আছেন’, ‘এবার ট্যুরে যাবি না?’ অ্যাসাইনমেন্টের লাস্ট ডেট কবে?’ এসব লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন জীবনে টেনে নিয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য হলেও।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এতে অ্যালামনাইয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘মানুষের মাঝে সংকীর্ণতা একটি মহাপাপ। কিন্তু আজকের সমাজে আমরা এই জায়গাটায় বারবার হোঁচট খাচ্ছি। কেন যেন ব্যক্তিগত স্বার্থে আমরা অনেক সংকীর্ণ হয়ে যাই, পেশাগত স্বার্থে সংকীর্ণ হয়ে যাই।’

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকতা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংকীর্ণতা কাম্য নয় বলে মনে করেন আরেফিন সিদ্দিক বলেন ‘আমরা হয়ত বিভিন্ন পেশায় আছি, কিন্তু আমাদের যে একাডেমিক জায়গা, যে বিষয়ে আমরা পড়ালেখা করেছি, সেটি হলো সাংবাদিকতা, গণযোগাযোগ, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তখনই কার্যকর হয়, যখন আমি নিজেকে অনেক উদার মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। সাংবাদিকতা শিক্ষার পর কারও মাঝে যদি বিন্দুমাত্র সংকীর্ণতা থাকে, তাহলে আমি মনে করি, সাংবাদিকতা শিক্ষাটা আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে দিতে পারিনি।’

সবাইকে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানবতার যে উদার একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার, মানবতা বোধে দীক্ষিত মানুষ যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলেন, সেটি আমাদের সবসময় চর্চা করা দরকার। আমরা সবসময় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকব এবং উদার মন-মানসিকতা নিয়ে নিজেদের পরিচালিত করব। সেটি আমাদের সাংবাদিকতা পেশা হতে পারে, সরকারি কর্মক্ষেত্র হতে পারে, বিচারালয় হতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে। যেখানেই হোক সে কাজটি আমরা করব।’

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকব, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি, এই বিভাগের স্মৃতি আমার সাথী হয়ে থাকবে। এই বিভাগের প্রয়োজন সবসময় আছে এবং থাকবে।’

সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সারাবাংলাডটনেট ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগ প্রতিবছর নতুন নতুন সাংবাদিক বাজারে প্রেরণ করছে। আমরা যারা পুরনো পণ্য হিসেবে আছি তাদের এটি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমি সাংবাদিকতা পেশায় এসে দেখেছি যে, আমার নিজের জন্য এটি একটি লড়াই। এ লড়াই নিজের সঙ্গে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমি যেটা অনুভব করি, একজন সৎ সাংবাদিককে নীতিবান সাংবাদিককে শুধু নিজের সঙ্গে নয়, এ লড়াই এ সমাজের সঙ্গে, সমাজে যে রাজনীতিবিদ, যে অর্থনীতিবিদ বাস করেন তাদের সঙ্গে লগাই। এ লড়াই বন্ধুর সঙ্গে, এ লড়াই সহকর্মীর সঙ্গে। এ লড়াই করে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে হয়। এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে আমরা আছি। সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হবে।’

তাদের সাথে লড়াই। এ লড়াই বন্ধুর সাথে লড়াই, সহকর্মীর সাথে লড়াই। এ লড়াই করে করে আমাদের বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকতা করতে হয়। এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে আমরা আছি। সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হবে।’

এ সময় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতার লড়াইয়ের ময়দানে প্রস্তুত করে পাঠানোর জন্য বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলির প্রতি আহ্বান জানান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান, বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন এবং সাবেক সচিব ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু আলম মো. শহীদ খানসহ বিভিন্ন অ্যালামনাই সদস্য স্মৃতিচারণ করেন।

সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন কুমার দাসের সভাপতিত্বে মিলনমেলায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন।

মিলনমেলায় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ বিভাগের শিক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকশত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পদচারণায় মুখরিত ছিল টিএসসি প্রাঙ্গণ।

আলোচনার অনুষ্ঠানের পর চা-চক্র আড্ডা হয়। এরপর মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা পারফর্ম করেন।

টিএসসি ডিইউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢা‌বি সাংবাদিকতা অ্যালামনাই সাংবাদিকতা বিভাগ

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর