হটলাইন-১০৯ সম্পর্কে জানে না দ্বীপাঞ্চলের নারীরা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা হটলাইন-১০৯ সম্পর্কে জানেই না দেশের সুবিধাবঞ্চিত এলাকার নারীরা। চট্টগ্রামে ‘জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন: সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে বিষয়টি উঠে এসেছে।
সংলাপে বক্তারা বলেছেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে হলে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশের উপকূলীয়, দুর্যোগপ্রবণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকার নারীদের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছাতে হবে।’
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে হোটেল সেন্টমার্টিনের সম্মেলন কক্ষে যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভসের (এসডিআই) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
সংলাপের মূল প্রতিবেদনে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এসডিজি এবং বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালার আলোকে জেন্ডার সমতা ও নারী ক্ষমতায়নের চট্টগ্রামের একটি তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্দ্বীপের মতো উপজেলায় জরুরি প্রয়োজনে সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা ও সক্ষমতা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নেই। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া চট্টগ্রামের নারীদের ৬৯ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন। সন্দ্বীপে এই হার মাত্র ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে মহিলাদের অংশগ্রহণ যেখানে ৩৩ শতাংশ সেখানে সন্দ্বীপে এই হার মাত্র ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্গমতার কারণে দুর্যোগপ্রবণ ও দূরবর্তী দ্বীপাঞ্চলে বসবাসরত গর্ভবতী মা ও শিশু নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয়হীতার কারণে পূর্ণাঙ্গ সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে হলে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায় নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু জনবল সংকট এবং নানা ধরনের সামাজিক প্রতিকূলতার কারণের দেশের উপকূলীয়, দুর্যোগপ্রবণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় নারীরা সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব অঞ্চলের নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ও সুনির্দিষ্ট সরকারি পরিষেবা চালু করা এবং চলমান পরিষেবাগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
সংলাপের অতিথি সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যে বিষয়টি প্রতিবেদনে এবং সবার বক্তব্যে উঠে এসেছে সেটা হচ্ছে সুযোগগুলো তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কথা বলেছেন, একেকটি গ্রাম হবে একেকটি শহর। অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া মানুষকেও উন্নত সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর অনেকগুলো অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং তিনি নিজে সেগুলো মনিটরিং করছেন। পিছিয়ে পড়া জনগণের ক্ষমতায়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আরেক অতিথি সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীসহ সকল অধিবাসীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সরকার কৌশল নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ কিন্তু নারীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ আছে। সরকার কাজ করছে। একথা ঠিক যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা এখনও অনেক সুযোগসুবিধা সেভাবে পাচ্ছেন না। সরকার দ্রুত সেই অভাব পূরণে কাজ করছে।
তিনি বলেন, সন্দ্বীপের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে জরাজীর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভেঙে নতুন করে ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলাতানা পারু, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনাল মাহবুব।
পরে উন্মুক্ত আলোচনায় অনুষ্ঠানে আসা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার নারী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা এই দ্বীপের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেন। তাদের কথায় এই উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট, যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা ওঠে আসে। এগুলো সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও সংলাপে বক্তব্য দেন।