ঢাকা: দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ করেও ‘আমানকাণ্ডে’ তা সম্পন্ন করতে না পেরে হতভম্ব বিএনপি। এদিকে ‘কাউন্সিলের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শাও নোটিশে সরকারের ইন্ধন আছে’— দলটির শীর্ষ নেতাদের মুখে এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহকে কারা মাঠে নামিয়েছে, তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
বিএনপি এবং ছাত্রদলের অনেকেরই সন্দেহ- কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের সাবেক কয়েকজন ‘প্রভাবশালী’ নেতা এবং নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার প্রতিবাদে যারা মাঠে নেমেছিল, তারাই আমান উল্লাহকে ইন্ধন দিয়েছে। এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে কথা বলছেন কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমান উল্লাহ আমাদেরই ছেলে। সে কারও প্ররোচনায় এ কাজ করেছে, নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে— বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাউন্সিলের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর আমাদের সংগঠনের একটা ছেলে এভাবে মামলা করতে পারে আর সেই মামলার ভিত্তিতে কোর্ট এভাবে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিতে দিতে পারে, বিষয়টি আমরা ভাবতেই পারছি না। আমরা রীতিমতো হতভম্ব।’
দলীয় সূত্রমতে, ছাত্রদলের সাবেক দুই সভাপতি এবং একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি যারা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা কিছুতেই চান না ইলেকশনের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন হোক। বরং তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সিলেকশনের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানাতে চান।
জানা গেছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এদের পছন্দের প্রার্থীরা ‘বিয়ে’, ‘বয়স’, ‘ছাত্রত্ব’, ‘শিক্ষাবর্ষ’সহ নানা কারণে বাছাই পর্বে বাদ পড়েছেন। সে কারণেই কাউন্সিল আটকে দিয়ে সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্ধাণের একটা পথ খুঁজছিল তারা। এই খোঁজা-খুঁজির মধ্যেই বয়সের কারণে প্রার্থী হতে না পারা আমানকে পায় তারা। আর এই আমানকে দিয়েই আদালতে মামলা করে কাউন্সিলের পথ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
অসমর্থিত আরেকটি সূত্র জানায়, আমানের পেছনে ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রুপের ইন্ধন রয়েছে। যে বসয়সীমা ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্রদলের বিদ্রোহীরা, সেই ইস্যুটিই মামলার আরজিতে তুলে ধরেছেন আমান।
বিএনপির একজন আইনজীবী জানান, আমান তার আরজিতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, রাতের বেলায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্তি এবং বয়সসীমা বেঁধে দেওয়াও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এ ধরনের সিদ্ধান্তের পরও তিনি প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন বাতিল হয়েছে। ফলে তার অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। এ জন্য তিনি কাউন্সিলের ওপর স্থগিতাদেশ চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু বিদ্রোহীদের আন্দোলনের ইস্যুটি আমানের মামলার আরজিতে উঠে এসেছে, সেহেতু আমানের পেছনে বিদ্রোহী গ্রুপের ইন্ধন থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই বিদ্রোহী গ্রুপের আন্দোলনের সঙ্গে আমানেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানা গেছে।
বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য এক সূত্রমতে, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাই হোক, ছাত্রদলের সাবেক কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাই হোন অথবা ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রুপ— যারাই আমানকে দিয়ে এই কাজটি করাক না কেন, সব আয়োজন শেষে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব হতভম্ব। দলের একটি সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, এমনটি ভাবতেই পারছেন না বিএনপি নেতারা।
আর সে কারণেই আদালতে নিষেধাজ্ঞার পর দফায় দফায় বৈঠক করেও বিএনপির শীর্ষ নেতারা কাউন্সিলের ব্যাপারে মিডিয়াকে গোছানো কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি। বরং ছাত্রদলের কাউন্সিলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ছাত্রদলের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন তারা। যদিও শুরু থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাত্রদলের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন।
দলীয় সূত্রমতে, কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনের পথ বন্ধ করলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাল ছাড়ছেন না। বিষয়টি নিয়ে তালগোল পাকালেও কাউন্সিলের মাধ্যমেই ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করবেন তিনি। আদালতের বিষয়টি ফয়সালা হলেই পুনরায় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।