এনআরসি নিয়ে ঢাকা-নয়াদিল্লি রাজনৈতিক আলাপ জরুরি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৯
ঢাকা: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে ভারতের মন্ত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিদিনই মন্তব্য করছেন। তাদের মন্তব্যে বাংলাদশের নামও জড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনআরসি ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে এখনই রাজনৈতিক আলোচনা জরুরি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ ঝামেলা এড়াতে ঢাকাকে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এনআরসি ইস্যুতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান যে, ‘এনআরসি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবৈধদের কী বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে?’ জবাবে ভারতের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘না। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন যে, বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ। এমনকি ঢাকা সফরেও তিনি একই কথা বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনআরসি একটি জটিল ও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। সময়ই বলে দেবে, গোটা এনআরসি প্রক্রিয়া শেষে আসলে কী ঘটবে। তাই ভবিষ্যতে বিষয়টা কীভাবে নিষ্পত্তি হবে তা এখন আলোচনা না করাই ভালো। আমার কাছে এই বিষয়ে এর বেশি কিছু নাই।’
এনআরসি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়; কিন্তু এটার একটা স্পিল ওভার (শঙ্কা বা নেতিবাচক পরিস্থিতি) প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে যে, ভারতের রাজনীতিবিদরা যা বলছেন আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে যা বলেছেন, তার মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এনআরসি ইস্যু আসলে কোনদিকে যাচ্ছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে এই ইস্যুটা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার বিষয়।’
সাহাব এনাম খান আরও বলেন, ‘এনআরসি বিষয়টি সুরাহার জন্য দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে যাওয়ার মতো অবস্থা এখনও আসেনি। তবে ভারত যেহেতু বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ, তাই এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হওয়া জরুরি। দুই দেশের রাজনীতিবিদদের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত এই কারণে যে, এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশের নাম জড়ানো হচ্ছে। ফলে ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
‘যেহেতু ভারতের রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে কথা বলছেন তাই জনগণের মাঝেও এর একটা প্রভাব কাজ করবে। বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে এমন নেতিবাচক প্রভাব কাজ করলে তা দুদেশের বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ সার্বিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। তাই বাংলাদেশকে কোনোভাবেই এনআরসি ইস্যু হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।’- বলেন সাহাব এনাম খান।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মাসে যখন ঢাকা সফরে এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সামনেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বিষয়টি একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ। এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমি ভারতের মন্ত্রীর এই কথা বিশ্বাস করি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারতের মন্ত্রী আমাকে বলেছেন যে, তাদেরকে কখনোই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।’
প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্যানুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ নাগরিক। অর্থাৎ প্রায় ১৯ লাখ বসবাসকারী চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তারা আগামী ১২০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ পাবেন।
আসামে অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করতে নাগরিক বিল প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই তালিকা সংশোধন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর থেকে যে সমস্ত ‘বাংলাদেশি’ নাগরিক বেআইনিভাবে ভারতে গিয়ে বসবাস করছেন তাদের তালিকা সংশোধনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে যে সমস্ত বসবাসকারী ভারতের নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন না তাদের কপালে কী ঘটবে, তা অনিশ্চিত। বিভিন্ন সংগঠন এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।