Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অভিভাবক শূন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ঝুলছে হাজার অভিযোগ


১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৩৩

ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের চাকরির মেয়াদ গত ১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে একমাস আগেই চাকরির থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর এখনো নিয়োগ হয়নি কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান। যে কারণে গত আড়াই মাস ধরে শূন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদ।

চেয়ারম্যান ছাড়াও শূন্য রয়েছে কমিশনের সদস্য পদগুলোও। দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান বা কমিশনার না থাকায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গত দুই মাসে আরও ৭৮টি অভিযোগ জমা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানিক অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মনবাধিকার কমিশন সচিব হিরণ্ময় বাড়ৈ এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান না থাকায় নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। চেয়ারম্যান ছাড়াও কমিশনের সদস্য পদগুলোও এখন ফাঁকা। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জুডিশিয়াল কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে দাপ্তরিক কার্যক্রম ঠিকভাবেই চলছে।’

দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদটি খালি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশন কী কাজ করছে? এই কমিশনের আউটপুটই বা কি? সমাজে এই কমিশনের কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে? যে উদ্দেশ্য নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে তা কি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারপরেও বলবো মানবাধিকার কমিশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদ বেশিদিন শূন্য রাখা সমীচীন হবে না। খুব শিগগির কমিশনে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে মানবাধিকার কমিশন মৃত অবস্থায় আছে।’ তিনি বলেন, ‘দুই মাস ধরে এমন একটি একটি সংবিধিবদ্ধ কমিশনের কোনো অস্তিত্বই নেই এটা কাম্য নয়। অথচ এখানে আমলা আছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন যারা বেতন পান। এমন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র গুরুত দিচ্ছে না এমন সমালোচনা এখন হতেই পারে। কেন না প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীন বলা হলেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটা–‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে কারণ এই কমিশন চেয়ারম্যান ও সদস্য বাছাই এর জন্য যে কমিটি তা সরকার নিয়ন্ত্রিত। এই কমিশনের নথিসহ বেশকিছু কাজ আইনমন্ত্রণালয়ের অধীনে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির পেছেনে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারপরও যেন মনে হচ্ছে মানবাধিকার কমিশন নিয়ে কেউ কিছুই ভাবেন না।’

বিজ্ঞাপন

মিজানুর রহমান আরও জানান, রাষ্ট্রপতি যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন, বাছাই কমিটির প্রধান হলেন মাননীয় স্পিকার এই কমিটি প্রতি পদের জন্য দুটি করে নাম পাঠাবেন। এখান থেকেই রাষ্ট্রপতি সাত  সদস্যবিশিষ্ট কমিশনের নিয়োগ দেবেন। নথিপত্র রেডি করবে আইনমন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে তাদের তো গাফলতি আছেই। আইনমন্ত্রলালয় হলো লিডিং মিনিষ্ট্রি-তারাই নিয়োগের প্রথামকি কাজ করেন। এর আগে এত লম্বা সময় কমিশন ফাঁকা ছিল না। ২০১৬ কেবল এক মাসের মতো ফাঁকা ছিল এই পদটি। এটি সত্যিই অযৌক্তিক।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই মাস ধরে নয়, কিছুদিন হলো মানবাধিকার চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়েছে। আমরা দ্রুতই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিচ্ছি। সে প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য পদেও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশাকরি শিগগিরই সমস্যা সমাধান হবে।’

কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ২ জুলাই থেকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদটি শুন্য রয়েছে। কাজী রিয়াজুল হকের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩ আগস্ট। কিন্তু ৭০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এক মাস আগেই অর্থাৎ ২ জুলাই থেকেই তিনি কমিশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। ওই দিন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন কমিশনের সদস্য মো. নজরুল ইসলাম। তারও চাকরির মেয়াদ ১ আগস্ট শেষ হয়েছে। আর ৬ আগস্ট থেকে বাকি পাঁচ সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়।

কমিশনের আইন অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন চেয়ারম্যান। তাই কমিশন মূলত চেয়ারম্যাননির্ভর প্রতিষ্ঠান। অভিযোগের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত আসে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে।

২০১৬ সালের ২ আগস্ট কাজী রিয়াজুল হককে তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। পাশাপাশি কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম, পাঁচজন অবৈতনিক সদস্য- অধ্যাপক আক্তার হোসেন, অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, বাঞ্চিতা চাকমা, সাংবাদিক এনামুল হক চৌধুরী ও সাবেক জেলা জজ নুরুন্নাহার ওসমানীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সবার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

কমিশন নিয়োগ আইনে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রদানের জন্য নিম্নবর্ণিত সাত জন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে, যথা- (ক) জাতীয় সংসদের স্পিকার, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন; (খ) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী; (গ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী; (ঘ) চেয়ারম্যান, আইন কমিশন; (ঙ) মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; (চ) জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত দুইজন সংসদ সদস্য, যাদের মধ্যে একজন সরকার দলীয় এবং অন্যজন বিরোধী দলীয় হইবেন।

(২) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাছাই কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে। (৩) অন্যূন ৪ (চার) জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হবে। (৪) বাছাই কমিটি, চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে এবং সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত প্রদানের অধিকার থাকবে। (৫) বাছাই কমিটি এই সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

তারই আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য স্পিকারের নেতৃত্বে বাছাই (সার্চ) কমিটি রয়েছে। সে কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগে সুপারিশের জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সার্চ কমিটি এরই মধ্যে বৈঠকও করেছেন বলে জানা যায়।

এদিকে, নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক, সাবেক ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) শীপা হাফিজা, সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকসহ এ তালিকায় রয়েছে কয়েকজন বিচারপতিরও নাম।

সারাবাংলা/এজেড/জেডএফ

কমিশন চেয়ারম্যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন শূন্য

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর