১১ মাসেও গুছিয়ে ওঠেনি বার্ন ইনস্টিটিউট, প্রথমদিনে রোগী ভর্তি ৪
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৫১
ঢাকা: উদ্বোধনের প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভেতরের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। নিয়োগ দেওয়া হয়নি ডাক্তার, নার্সসহ পর্যাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীও। এর মধ্যেই রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে সেখানে শুরু হয়েছে রোগী ভর্তি।
প্রথম দিনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন চারজন রোগী। আর এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ভবনটির অষ্টম ও নবম তলায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা আলাদা চারটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা আরেকটু গুছিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটি করতে গেলে আরও দেরি হয়ে যেত। এখানে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন রোগী আসছে। চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে বলেই রোগী ভর্তি শুরু করেছি।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৮ তলার বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রথম চার তলা এবং অষ্টম ও নবম তলা বাদে বাকি ফ্লোরগুলো একরকম খালিই পড়ে আছে। উপরের দিকের কয়েকটি ফ্লোরে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়নি। প্রথমদিন সবগুলো এলিভেটর ও লিফট চালু করা হলেও যান্ত্রিক ত্রু টির কারণে দুটি লিফট বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ কাজের শব্দের কারণে হাসপাতালটিতে সেবা দেওয়ার পরিবেশেই তৈরি হয়নি।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া প্রথম রোগীর নাম রিনা আক্তার। গাজীপুর থেকে আসা রিনা জানান, পুড়ে যাওয়া পুরানো ক্ষত সারাতে এখানে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এর জন্য তাকে যেতে হবে সার্জারি টেবিলে। আগেও কয়েকবার হাসপাতলে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। তবে এমন নির্জন হাসপাতাল আগে দেখেননি তিনি।
রিনা বলেন, ‘বিশাল এই মহিলা ওয়ার্ডে আমি একমাত্র রোগী। ডাক্তার ও নার্সরা আসছেন। প্রয়োজনীয় কথা সেরে তারা চলে গেলে পুরো ভবনটিকে একা মনে হয়। একটু ভয় লাগে, আবার ভালোও লাগে। ড্রিল মেশিনের শব্দ বাদ দিলে এখন পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা সেবার পরিবেশ বেশ ভালো।’
এ ব্যাপারে বার্ন ইনস্টিটিউটের ওয়ার্ড মাস্টার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ নির্মাণ কাজ চলবে। অনেকগুলো কক্ষে ফ্যান, লাইট এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগানো হচ্ছে। উপরে ক্যান্টিন ও জিমনেশিয়ামের কাজ চলছে। কয়েকটি বাথরুমে পানির সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ছোট কাজ। দ্রুতই কাজগুলো শেষ হবে।’
কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন থেকেই চারটি ওয়ার্ডে একযোগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেছে বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দুটো ওয়ার্ডে পুরুষ রোগী, একটিতে নারী এবং একটি ওয়ার্ডে শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে। এই সপ্তাহের শেষে অপারেশন থিয়েটারও চালু হবে। এছাড়া ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), পুরুষ এসডিইউ কেয়ার, নারী এসডিইউ কেয়ার বেডও আগামী সপ্তাহে চালু করা হবে বলে জানান বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আবুল কালাম।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন হাসপাতাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। রাজধানীর চাঁনখারপুলে এক দশমিক ৭৬ একর জমিতে ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলাবিশিষ্ট এই বার্ন ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হয়।
এই ইনস্টিটিউটে বার্ন ইউনিট, প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং একাডেমিক উইং মিলে তিনটি ব্লক থাকছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে ৫০০টি শয্যা। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২২টি আইসিইউ শয্যা, উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার হাই ডেফিসিয়েন্সি ইউনিটে ২২টি শয্যা, ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড রাখা হয়েছে।
রোগী ভর্তি শুরু শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট