ঢাকায় আজ বসছে তিনদিনের জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:২১
এমদালু হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: কৃষি ব্যবস্থা যান্ত্রিকীরণের অংশ হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো বসছে জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিশনে এ মেলা শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী সোমবার। উদ্যোক্তারা বলছেন, এর ফলে দেশীয় কৃষির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যাবে।
‘কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে-অর্থ-শ্রম-সময় বাঁচবে’এ প্রতিপাদ্যে তিন দিনের এ মেলার উদ্যোক্তা কৃষি মন্ত্রণালয়। মেলায় সরকারি-বেসরকারি ২১টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। যাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী থাকবে। এছাড়া র্যালি ও সভা-সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করবেন।
মেলা আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন মৌসুমে ফসল মাড়াই কাটাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে শ্রমিক সংকট কাটিয়ে উঠা যেমন সম্ভব, তেমনি উৎপাদন খরচও কমানো সম্ভব।
দেশের কৃষিখাতে এখনও যন্ত্রপাতির ব্যবহার তেমন বাড়েনি উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জন সচেতনতা বাড়াতেই প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও যন্ত্রপাতির সর্বশেষ অগ্রগতি ও কৃষি যান্ত্রিকীরণের গতিকে কিভাবে আরও বাড়ানো যায় বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা খোলা মেলা আলোচনাও করবেন এ মেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৮৭৩ টি পাওয়ার টিলার, ১ হাজার ২৯৪ ট্রাক্টর, ৭ হাজার ৫৫৮ টি পাওয়ার থ্রেসার, ২ হাজার ১৮০ টি রিপার, ১ হাজার ফুট পাম্প, ৫০০ স্প্রেয়ার, ১ হাজার ৩৩৮ টি সিডার, ৩৭৯ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার এবং ৭ টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় চালু করা হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা কেন্দ্র।
এদিকে, বর্তমানে সরকার প্রতিটি উপজেলায় কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহয়তা দিচ্ছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্র ক্রয়ে কৃষককে দাম দিতে হচ্ছে অর্ধেক। বাকিটা পরিশোধ করছে সরকার। কেনা যাচ্ছে জেলা বা উপজেলা থেকেই। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার কৃষক ৭০ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারছে কৃষি যন্ত্র। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যান্ত্রিকীকরণের মাত্রা বেড়েছে। জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতিও।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে জমি চাষে ৯০ , সেচে ৮০, মাড়াইয়ে ৭০, কর্তনে ২ ও রোপনে ১ শতাংশ ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। তবে শস্য রোপনে ২০২১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। রোপনে বর্তমানে ১ শতাংশ ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার হলেও ৪১ সালের মধ্যে তা ৮০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। আর ২০২১ সালের মধ্যে কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার, যা ৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রায় ৮০ শতাংশ।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের (কেআইবি) খোলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় এসিআই মটর, আলিম ইন্ড্রাস্ট্রিজ, দি মেটাল, চিটাগাং বিল্ডার্স, জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, বগুড়ার খুচরা যন্ত্রাংশ ও সিমিটের মতো প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
এ বিষয়ে খামার যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয়ভাবে শুরু হওয়া কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা আয়োজনের ফলে যন্ত্র ব্যবহারকারী, সেবাদাতা, ও যন্ত্রপ্রস্তুতকারীদের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে উঠবে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দেশে যে নতুন যুগের সূচনা শুরু হয়েছে সে বিষয়ে তারাও উদ্যমী হয়ে উঠবে। কৃষিখাত আরও গতিশীল হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএস