Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুথিদের দিকে ঘুরে যাচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধ


১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:১৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্প্রতি ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ সমর্থিত সেনারা সৌদি আরবের দাম্মামের আরামকো তেল কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থাপনায় ড্রোনের সাহায্যে হামলা চালিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় হুথি গেরিলা ও তাদের সমর্থিত সেনারা সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী নাজরান এবং আসির প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। কিন্তু এবার তারা এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরবর্তী দাম্মামে হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়- ইয়েমেন যুদ্ধ যে হুথিদের দিকে ঘুরে যাচ্ছে এটি তারই ইঙ্গিত।

হুথিদের হামলায় বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা না হলেও সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সৌদি আরব ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিন্তু সৌদি আরব দারিদ্র্যপীড়িত ইয়েমেনের হুথিদের এই হামলাকে তেমন একটা পাত্তা দেয়নি। বরং তারা গরীব হুথিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে আসছে। এর কারণ হলো- একে তো ইয়েমেন দারিদ্র্যপীড়িত দেশ; তার ওপর দেশটির পুরো জনগোষ্ঠী হুথিদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ নয়। এছাড়া অস্ত্র ও সামরিক শক্তিতে সৌদি আরবের চেয়ে অনেকগুণ পিছিয়ে রয়েছে হুথিরা।

বিজ্ঞাপন

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনে থাকে। আর এই অস্ত্রের যোগানদাতা হলো আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডাসহ ইউরোপের বেশকয়েকটি উন্নত দেশ। এসব অস্ত্রকে মনে করা হয় গুণে ও মানে বিশ্বসেরা। এছাড়া সৌদি আরব যে জোট করেছে সেখানে নিজ দেশের সেনাদের পাশাপাশি মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান ও বাহরাইনের সেনা রয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সেনা রয়েছে; যারা সামরিক দিক দিয়ে সৌদি আরবের জন্য ভরসার এক বিশাল জায়গা।

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সৌদি আরব জোটবদ্ধভাবে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম ইয়েমেনের ওপর সামরিক হামলা চালায়। ওই সময় তাদের ধারণা ছিল যে, তারা দুয়েকদিনের মধ্যেই ইয়েমেনের দখল নিয়ে হুথিদের নির্মূল করে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আব্দু রাব্বু মানসুর হাদিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসাতে পারবে। তাদের এই ধারণার পেছনে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও জোট সেনাদের অংশগ্রহণ প্রাধান্য পেয়েছিল। এছাড়া সৌদি আরবের জন্য আমেরিকার সবধরনের সমর্থন, সামরিক পরামর্শ ও উপদেশ ছিল। এ কারণেই তারা ইয়েমেনের হুথিদেরকে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দেখা গেল যে, সৌদি আরবের অত্যাধুনিক অস্ত্র, আরব দেশগুলোর জোট ও পাকিস্তানের সৈন্যদের সশস্ত্র উপস্থিতি হুথিদের জন্য খুব বড় কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। একথা ঠিক- সৌদি আরব ও তাদের মিত্রদের হামলায় ইয়েমেনে বেসামরিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরব যে হুথিদেরকে নির্মূল করে আব্দু রাব্বু মানসুর হাদিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে চেয়েছিল, সেই লক্ষ্য তারা পূরণ করতে পারেনি। বরং তারা ইয়েমেন যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আটকে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে স্পষ্টভাবে বলা যায়- এই যুদ্ধ তাদের জন্য ভয়াবহ পরাজয় ডেকে আনতে যাচ্ছে।

সামরিক হামলা শুরুর দু-চারদিনের মধ্যেই ইয়েমেন দখল হবে- এমন ধারণা সৌদি আরবের জন্য শুধু ভুলই প্রমাণিত হয়নি উপরন্তু তাদের জন্য এখন এক ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সৌদি জোটের ভয়াবহ হামলার মুখে ইয়েমেনের হুথিরা আত্মসমর্পণ না করে বরং ওই সময় থেকেই তারা ইস্পাত-দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং সৌদি জোটের মোকাবিলা শুরু করে। এই যুদ্ধে তারা মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে।  এখন এ কথা খুব পরিষ্কার যে, তারা এ যুদ্ধের একটা পরিণতি দেখে ছাড়বে; আত্মসমর্পণ করবে না। তাদের সামনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, তাও বোঝা যায়। তারা নিজেদের মতো করে সামরিক সরঞ্জামের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তারা ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে, সাধারণ পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। এছাড়া নিজেরা ড্রোন বানিয়ে সেই ড্রোন দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোথাও কোথাও হামলা চালিয়ে আসছে। অবশ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে এবং কার্যত সৌদি জোটে আর নেই।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইয়েমেনের হুতি সমর্থিত সেনারা এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে দাম্মামের আরামকো তেল কোম্পানির ওপর একসঙ্গে ১০টি ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালায়। যা এই সময়ে নজিরবিহীন ঘটনা। তবে এটাও ঠিক যে, আরামকোর মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল স্থাপনা সৌদি আরব এবং আমেরিকার অরক্ষিত রাখেনি। তারপরেও সেখানে ইয়েমেনের ১০টি ড্রোন একসঙ্গে, একযোগে কিভাবে হামলা চালাতে পারল সে প্রশ্ন কিন্তু এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

ইয়েমেনের হুথিরা একেবার হঠাৎ করেই এ হামলা চালায়নি। তারা বেশকয়েক মাস আগে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভেতরে হামলা চালিয়েছিল তখনই তারা সতর্ক করে বলেছিল যে, ‘আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের ভেতরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালাব’। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি তারা ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলো পর সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সৌদি আরবের বিমানবন্দর, সামরিক ঘাঁটি এবং তেল স্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়াগাগুলো আমেরিকা থেকে কেনা প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে বলেই সবার ধারণা। এরপরেও যখন হুথি যোদ্ধারা সফলভাবে আরামকোর মত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনায় হামলা চালায় তখন তার অর্থ দাঁড়ায়- সৌদি আরবের সেনা এবং আমেরিকা থেকে কেনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না। এগুলো যদি কাজ করতো তাহলে ইয়েমেনের মত সাধারণ একটি গরীব দেশের প্রযুক্তির কাছে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মার খাওয়ার কথা নয়। এখন একথা খুব পরিষ্কার যে, আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হুথিদের ড্রোনকে শনাক্ত ও সেগুলোকে ভূপাতিত করতে পারছে না।

এত হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে সৌদি আরবকে কোনো দুর্বল সামরিক সরঞ্জাম দেবে আমেরিকা, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এখানে শুধু আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ই জড়িত নয়। বরং এখানে আমেরিকার তেলের স্বার্থ ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ইয়েমেনের হুথিরা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেমন- উত্তরে পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইরানের বিপ্লবী সরকার এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর হাতে। আর দক্ষিণে বাব আল-মান্দেব প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে সৌদি আরব ও আমেরিকার ভাষায় ইরানপন্থী হুথিদের হাতে। এ বিষয়টি সৌদি আরব, আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা কেউই মেনে নিতে পারছে না। ফলে ইয়েমেন যুদ্ধকে দৃশ্যত সৌদি আরব এবং কয়েকটি আরব দেশের যুদ্ধ হিসেবে দেখলেও এর পেছনের প্রধান শক্তি হচ্ছে আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদের তেলের প্রবাহ তাদের মতো করে নির্বিঘ্ন রাখতে হলে বাব আল-মান্দেব প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ কোনভাবেই হুথিদের হাতে যেতে দেওয়া যাবে না। ফলে এ যুদ্ধে সৌদি আরব, আমেরিকা ও তার পাশ্চাত্যের মিত্ররা কখনই হারতে চাইবে না। এবং তারা সে কাজটিই করে যাচ্ছে।

সৌদিআরব ও আমেরিকা সব সময় বলে আসছে যে, ইরান এই যুদ্ধে ইয়েমেনের হুথিদেরকে সহযোগিতা করছে। যদি তাই-ই হয় তাহলে তাদের মনে রাখা দরকার যে, এই যুদ্ধে তারা জিততে পারবে না। কারণ ইরান-ইরাক যুদ্ধে সৌদি আরব ও আঞ্চলিক সমস্ত দেশ এবং আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের সব দেশ অর্থ ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ইরাকের পাশে দাঁড়িয়েছিল। পাশাপাশি ইরাকেরও ছিল বিশাল সেনাবাহিনী। বলা হয়ে থাকে- ইরাকি বাহিনী ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বাহিনী এবং মধ্যপ্রাচ্যে সাদ্দাম ছিলেন আমেরিকার মদদপুষ্ট সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক। দেশটির প্রতি আমেরিকা ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ব্যাপক সমর্থনের পরেও আট বছরের যুদ্ধে প্রথম দিকে ইরাক দখলদারিত্বের পর্যায়ে থাকলেও ধীরে ধীরে তারা ইরানি সামরিকবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের হামলার মুখে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যায়ে অবস্থা যখন দিন দিন বেগতিক হয়ে পড়ছিল তখন জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে ইরাকের একটি চুক্তি হয়। আর এর মধ্য দিয়েই যুদ্ধের আপাতত সমাপ্তি ঘটে। ইয়েমেন যুদ্ধে যদি ইরান জড়িয়ে পড়ে এবং তারা যদি হুথিদের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখে তাহলে যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি না আসা পর্যন্ত সরে দাঁড়াবে না।

সাম্প্রতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইরান যেখানে সমর্থন দিয়েছে সেখানে থেকে খুব সহজেই নিজেদের প্রত্যাহার করেনি। বোঝা যায়, ইরানের সমর্থন মোটেই নড়বড়ে নয়। পাশাপাশি ইরানি প্রযুক্তির কাছে আমেরিকার সামরিক প্রযুক্তি নগণ্য বলেই ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ইরান যদি হুথিদের সমর্থন দেয় তবে সেটা সামরিক সমর্থন হওয়াই স্বাভাবিক। ফলে হুথিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পেছনে ইরানের মেধা থাকার কথা। সেই ড্রোন যখন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর বলে প্রমাণ হচ্ছে তখন ধরে নিতে হবে ইরানি মেধা ও প্রযুক্তি কাজ করছে। সেক্ষেত্রে ইরান ও ইয়েমেনের হুথিদের সামনে এখন লক্ষ্য থাকবে। তারা এই যুদ্ধ থেকে আর পেছনে ফিরে আসবে না। জয়-পরাজয় ছাড়া হুথিদের এই যুদ্ধের অবসান ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন সৌদি আরব ও তার মিত্ররা যদি হুথিদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে ইয়েমেন থেকে তাদের গুটিয়ে নেয় তাহলে হয়তো এই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। সৌদি আরব ও তার মিত্রদের সামরিক হামলার কারণে হুথিরা যুদ্ধ বন্ধ করবে না। এখন তারা দাম্মামের আরামকোয় হামলা চালিয়েছে। এক সময় তারা এর চেয়ে বেশি গভীরে ঢুকে যাবে; পরিস্থিতি তাই-ই বলছে। এছাড়া মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের এই যুদ্ধকে অনৈতিক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে; মানুষ এ যুদ্ধকে পছন্দ করছে না।

অতএব অবিলম্বে সৌদি জোটের এই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। না হলে তাদের ক্ষতির মাত্রা দিন দিন বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ড্রোন হামলায় আরামকোর তেল স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার ধকলে উৎপাদন ৫০ ভাগ অর্থাৎ ৫৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন কমে গেছে। পরিস্থিতি দিন দিন যেদিকে যাচ্ছে তাতে সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে এর প্রভাব মারাত্মক হয়ে দেখা দেবে। ওই রকম পরিস্থতিতে সৌদি আরব হয়তো যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হবে। মনে রাখতে হবে, ভিয়েতনামের মতো ছোট শক্তির কাছেও আমেরিকা আটকে গিয়েছিল।

লেখক: রেডিও তেহরানের সাংবাদিক

আমেরিকা ইয়েমেন যুদ্ধ ইরান সৌদি আরব হুতি বিদ্রোহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর