Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাটির নিচে কেন তেল মজুত করেছে যুক্তরাষ্ট্র?


১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৩০

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলায় নজিরবিহীন ক্ষতির শিকার হয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা আরামকোর দুটি স্থাপনা। আর তাই সৌদিতে তেল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে বিশ্ববাজারে বেড়েছে তেলের দাম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে টেক্সাস ও লুইজিয়ানা রাজ্যে তাদের কৌশলগত তেলের মজুত ব্যবহারের কথা। বিপৎকালীন সময়ের জন্য ভূগর্ভস্থ স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) হিসেবে অন্তত ৬৪০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল জমা করে রেখেছে দেশটি। খবর বিবিসির।

বিজ্ঞাপন

ইন্টারন্যাশনাল অ্যানার্জি এজেন্সি সদস্যভুক্ত সব দেশকেই পরামর্শ দেয়, যাতে চাহিদা মোতাবেক অন্তত ৯০ দিনের পেট্রোলিয়াম সংরক্ষণ করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রই কৃত্রিম লবণ গুহায় (সল্ট ক্যাভেরান) সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল জমা করে রাখে। টেক্সাস ও লুইজিয়ানায় যুক্তরাষ্ট্রের এরকম ৪টি তেল সংরক্ষণাগার রয়েছে।

কেন তেল জমিয়ে রাখার চিন্তা মাথায় এল যুক্তরাষ্ট্রের?

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেল অবরোধ আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায়  শীর্ষ তেল রফতানিকার দেশ সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেল বিক্রি করবে না বলে জানায়। এই অচলা অবস্থা মাত্র তিন সপ্তাহ চললেও সেসময় ভুগেছে মার্কিন অর্থনীতি। বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩ ডলার থেকে ১২ ডলার।

সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ১৯৭৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস পাস করে এনার্জি পলিসি অ্যান্ড কনজারভেশন অ্যাক্ট। পরিকল্পনা করা হয় ভূগর্ভস্থ স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভের। টেক্সাস ও লুইজিয়ানার ৪টি সংরক্ষণাগারে তেল জমা করা হয়। এগুলোর অবস্থান টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট ও উইনি এবং লুইজিয়ানার লেক চার্লস ব্যাটন রাগে।

প্রতিটি সংরক্ষণাগারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩ শ ফুট গভীর কৃত্রিম সল্ট ক্যাভেরান তৈরি করা হয়েছে। মাটির ওপরে ট্যাংক করে তেল জমিয়ে রাখার চেয়ে এই পদ্ধতি সাশ্রয়ী ও অধিক নিরাপদ। ফ্রিপোর্টের সংরক্ষণাগারে সর্বোচ্চ ২৫৪ মিলিয়ান ব্যারেল তেল জমিয়ে রাখা যায়।

সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট অনুসারে ৬৪৪.৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুত রেখেছে মার্কিনিরা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত মার্কিন অ্যানার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিসট্রেশনের তথ্যমতে, মার্কিনিরা প্রতিদিন ২০.৫ মিলিয়ন ব্যারেল পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করে। সেই হিসেব অনুযায়ী কোনো পেট্রোলিয়াম আমদানি না করলেও মজুত তেল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলতে পারবে ৩১ দিন।

বিজ্ঞাপন

মজুত তেল বাজারে আসতে কত সময় লাগবে?

ভূগর্ভে সংরক্ষিত তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৯৭৫ সালে আইন করা হয়। সে নিয়মে বলা হয়েছে, একমাত্র জরুরি প্রয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুমতিক্রমে মজুত করা তেল ব্যবহার করা যাবে। তাও পরিমাণে তা খুব বেশি নয়। প্রেসিডেন্ট অনুমতি দিলেও এসব পেট্রোলিয়াম বাজারে আসতে সময় লাগবে প্রায় ২ সপ্তাহ। তেল অপরিশোধিত থাকায় গাড়ি বা বিমানে তা ব্যবহারে শোধনের প্রয়োজন হবে।

মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেটি সিএনবিসি দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সৌদি তেল স্থাপনায় হুতিদের হামলার ফলে এখনি রিজার্ভের তেল ব্যবহারের কথা ভাবা কিছুটা ‘অপরিণত চিন্তা’।

জমিয়ে রাখা তেল কি কখনো ব্যবহার হয়েছে?

আরব বসন্তের সময় সর্বশেষ ২০১১ সালে মজুত তেলের ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও সংরক্ষণাগার থেকে ব্যবহার করা হয় তেল। এছাড়া হারিকেন ক্যাটরিনা যখন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনেছিল তখন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেন জর্জ বুশ। ফেডারেল সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্ধেক সংরক্ষিত তেল বিক্রির প্রস্তাব তুলে ২০১৭ সালে হৈ চৈ ফেলে দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ২৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বিক্রি করেছিলেন।

তেল মজুত যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর