তৃতীয় দিনেও অবরুদ্ধ জারা জিন্সের মালিক
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:২৪
ঢাকা: তৃতীয় দিনের মতো গার্মেন্টেস কারখানার অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন মিরপুরের জারা জিন্সের মালিক। শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বকেয়া বেতনসহ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষের অর্থের যোগান হয়নি। শ্রমিকরা বলছেন, বুধবারের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মিরপুরের ‘জারা জিন্স’, বেকার হবেন ৮শ শ্রমিক
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে শ্রমিক ও বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএ-এর পরিচালক (শ্রম) রেজওয়ান সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাটির মালিক আটক রয়েছেন। মেশিনারিজের দাম উঠেছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বেতন দিতে দেড় কোটি টাকা লাগবে। আর মেশিনপত্রের দামও এমন হবে। তাই এখনো বিক্রি করা হয়নি।’
এর আগে সারাবাংলাকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘মালিকের টাকা নেই। প্রথমদিকে জারার মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পুলিশ ধরে বিজিএমইএ-তে নিয়ে আসে। এখন মেশিন বিক্রির চেষ্টা করছে। ১৫ সেপ্টেম্বর তিনটি পার্টি এসেছিল। কিন্তু সমঝোতা হয়নি। উনি (মালিক) সময় নিয়েছেন। তিনদিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৮ তারিখ টাকা পরিশোধ করার কথা দিয়েছেন।’
জানা গেছে, ক্রয় আদেশ না পাওয়া ও গার্মেন্টস পরিচালনায় মালিকপক্ষের ব্যর্থতার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মিরপুরের ‘জারা জিন্স’ নামের একটি কারখানা। এতে সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়বে অন্তত ৮০০ শ্রমিক। এর আগেও বেতন ও বোনাস পরিশোধে কারখানাটিকে বেগ পোহাতে হয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া জারা জিন্সের অপারেটর নুপুর আক্তার মমতাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালিক কারখানার ভেতরেই আছেন। এখানেই খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন। এখনো উনি কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। কাল টাকা দেওয়ার কথা। যদি দিতে না পারে তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবো। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দেবে, মালিককে গার্মেন্টেসের বাইরে এক পা’ও বের হতে দেওয়া হবে না।
’আরেক শ্রমিক মেহেদি হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কয়েক মাসের বেতন বাকি আছে। গার্মেন্টস বন্ধ করতে নিয়ম অনুযায়ী যে টাকা দিতে হয়, আমাদেরও তাই দিতে হবে।’
শ্রমিকরা আরও জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ মাসের বেতন ও এক মাসের বেসিক দেওয়ার কথা দিয়েছে মালিকপক্ষ।
চিড়িয়াখানা রোডের জারা জিন্স নামের ওই কারখানাটির মালিক পাঁচ জন। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে মালিকদের মধ্যে রয়েছে গোলাম মোস্তাফা, রেজা ও রিয়াজুল ইসলাম রাজু। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি। তবে শ্রমিক পক্ষ রিয়াজুল ইসলাম রাজুকেই মালিক হিসেবে জানেন। আর কারখানাটিতে তাকেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
এর আগে, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বকেয়া বেতনের দাবিতে মিরপুরের রাস্তায় নামে জারা জিন্সের কর্মীরা। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের দাবি, টানা তিনমাস ধরে বকেয়া বেতন-ভাতা দিতে তালবাহানা করছে মালিক পক্ষ। একাধিকবার প্রতিবাদ করেও এর সমাধান পাননি তারা। শ্রমিকরা মিরপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে যানজট তৈরি হয় গোটা রজধানীতে। পরে, পরিস্থিতি সামলাতে ওইদিন বিকেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিজিএমইএ-এর প্রতিনিধিদের নিয়ে মালিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রায় সাত ঘণ্টার টানা আলোচনা শেষে কারখানার মালিক সিদ্ধান্ত নেন আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন। শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত মানলেও কারখানা থেকে মালিক রিয়াজুল ইসলাম রাজুকে আর বের হতে দেননি। শ্রমিকরা শর্ত দেন টাকা পাওয়ার পরেই তিনি কারখানা থেকে বের হতে পারবেন।
এদিকে, গত চার মাসে দেশের ৩৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশি প্রতিযোগী দেশগুলোর সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এবং দেশের কারখানাগুলোর ক্রয় আদেশ কমে যাওয়াই এসব পোশাক কারখানা বন্ধের অন্যতম কারণ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। জারা জিন্সের বন্ধের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধের তালিকায় নতুন করে আরও একটি নাম যুক্ত হতে চলছে। আর অন্তত ৮০০ শ্রমিক নতুন করে বেকার হতে চলছেন।