আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:০৭
ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আগামীতে আর খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কারণ নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি মিলনায়তনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা এই চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা সভা শেষে অর্থমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আগে যারা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদেরকে আমরা শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ গ্রাহক দায়ী থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার যদি কোনা ব্যাংক কর্মকর্তা, কর্মচারী জড়িত থাকেন তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে যদি বিদ্যামান আইন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে খেলাপি ঋণ বাড়বে না। আর যদি বিদ্যামান আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া যায় তাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নতুন করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আর এ কারণে বলছি, ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ আর হবে না।’
আইন পরিবর্তন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাপি আইনের যে যে জায়গায় বিচ্যুতি রয়েছে সেসব জায়গায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে সেগুলো বলব না। এই আইনে সংশোধনী আনা হলে ব্যাংকগুলো লাভবান হবে। ফলে আইনের ফাঁকফোঁকরে যেন কেউ বের হতে না পারে। খেলাপি ঋণ কালচার থেকে ব্যাংক সেক্টর ও দেশ যেন মুক্তি পায়। আমাদের আর্থিকখাত যেন মুক্তি পাই আমরা সে ব্যবস্থা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আমরা রিফর্ম নিয়ে আসছি। এটি করতে গিয়ে যেখানে পরিবর্তন আনা দরকার সেখানে পরিবর্তন আনা হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বোনাসের যে অযৌক্তিক ব্যবস্থা রয়েছে প্রয়োজনে সেক্ষেত্রেও নতুন আইন করা হবে। কে কতটা বোনাস নেবে, কীসের ভিত্তিতে বোনাস নেবে তা নির্ধারণ করা হবে। বোনাস নেওয়া তো কিছু ইনডিকেটর্সের ওপর নির্ভর করে। সেই ইনডিকের্টসগুলো বসিয়ে দেওয়া হবে।’
ব্যাংক কমিশন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমরা নিজেরা ঘর গুছাচ্ছি। ঘর গুছিয়ে আমরা আমাদের আইনগুলো ঠিকঠাক করে, রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন ঠিক করব। তারপর আমাদের জনবল ঠিক করব। এটি করতে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে আমরা ব্যাংক কমিশন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে আমরা যে সার্কুলার দিয়েছি সেটি যখন আইনি প্রক্রিয়ায় চলে আসবে তখন আর নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হবে না। এর মধ্যে সবকিছু রয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি পেতে আমরা আইনি প্রক্রিয়ার কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসব। ঋণগ্রহীতা কোম্পানির পরিচালক, চেয়ারম্যান তারা সবাই পারসোনাল গ্যারান্টি দেবে। এই সমস্ত গ্যারান্টিগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী করা হবে। কেউ যদি ঋণ পরিশোধে ফেল করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নিতে পারব। এগুলো করতে পারলে খেলাপি ঋণ বাড়বে না।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে আমরা কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। যেন ব্যাংকের রেভিনিউ বৃদ্ধি পায়। কারণ এই চারটি ব্যাংক অর্থনীতির বিশাল এলাকা কাভার করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ব্যাংকের একাধিক শাখা আছে সেগুলো স্থানান্তর করা হবে। যেন একজনের কাস্টমার আরেকজন নিতে না পারে। আমরা ব্যাংকে হেলদি কমপিটিশন দেখতে চাই।’
আ হ ম মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘তিন মাস পরপর চারটি ব্যাংক নিয়ে সভা করা হবে। আমাদের মূল্যায়ণ আমরাই করব। আমাদের বিরুদ্ধে আগে যা দেখেছেন সেগুলো দেখতে পাবেন না। আমরা চারটি ব্যাংকের প্রিন্টিং স্টেটমেন্ট কোয়ার্টালি দেব। আমরা বিশ্বাস করি এ দেশের মানুষের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে সেখান থেকে আমরা কাজ করব। যে ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা দরকার আমরা সেই পরিবর্তন করব।’