পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, গৃহবধূকে গণধর্ষণ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:১০
ফেনী: প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে এক প্রতারক নারীর খপ্পড়ে পড়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় জড়িত ওই প্রতারক রহিমা সুন্দরী (৪০) ও তার এক সহযোগী সঞ্জু শিকদারকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে সোনাগাজী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির এলাকায় রহিমা সুন্দরীর বাসায় গণধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। রহিমা ওই এলাকার খোকন মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকেন। গণধর্ষণের পর দুর্বৃত্তরা ওই নারীর কাছ থেকে এক ভরি সোনার অলংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় ওই বিয়ে হয় এক যুবলীগকর্মীর সঙ্গে। তিন বছর আগে আধিপত্যের জের ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। দুই সন্তান নিয়ে পালক পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই নারী। নিঃসন্তান পালক বাবা তার বসত বাড়ির জমি ওই নারীকে দান করার প্রস্তাব তুললে তার ভাই-ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর তারা ওই নারীকে পিটিয়ে আহত করেন।
এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচী ও চাচাত ভাইয়ের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা যাতায়াত খরচ চাইলে দিতে পারেননি অসহায় ওই নারী। পরে তিনি থানা থেকে ফিরে আসেন। এসময় থানার মাঠে রহিমা সুন্দরী নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যান।
স্থানীয়রা বলেন, রহিমা ওই নারীকে তার পালক বাবার বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান এবং তাকে নিজের বাসায় রেখে দেন। সেখানেই ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ পাঁচ জন তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা সোনার অলংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে যান তারা। সকালে জ্ঞান ফিরলে ওই নারী রহিমার কাছে তার ওপর নির্যাতনের কারণ জানতে চান। এসময় সঞ্জু শিকদার ও আফলাছকে ডেকে এনে ফের ধর্ষণ করানো হয় ওই নারীকে। এ ঘটনা কাউকে বললে তার ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা।
পরে ওই নারী সোনাগাজী থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলে সেখানকার এক নারী পুলিশ রহিমা সুন্দরীকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। পরে সুন্দরী থানায় এসেই ওই নারীর সঙ্গে ঝগড়া করেন। তখন পুলিশ কর্মকর্তাও তাকে ধমক দিয়ে ঘটনাটি সামাজিকভাবে সমাধান করতে বলেন। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব কেউ না নিলে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানার ওসির কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ওই নারীকে। সেখানেই তিনি সুন্দরীসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিন জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলা দায়েরের পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে রহিমা সুন্দরী ও সঞ্জু শিকদারকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রহিমা চর দরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের মেয়ে। তিন বছর ধরে সোনাগাজী মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করছেন তিনি। একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সখ্য রেখে তিনি স্থানীয় বখাটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ান।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই নারী। মেডিকেল পরীক্ষার জন্য তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।