Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এই শহরে ক্যাসিনো!


১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৩০

ক্যাসিনো। নামটা শুনলেই দেশের বেশিরভাগ মানুষের মন চলে যায় লাস ভেগাসে। কারণ, সাধারণ জ্ঞানের জন্য অনেককেই এই প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে হয়েছে— ক্যাসিনোর শহর বলা হয় লাস ভেগাসকে। ঠিক যেমন পড়তে হয়েছে, মসজিদের শহর বলা হয় ঢাকাকে কিংবা নীরব শহর বলা হয় রোমকে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ক্যাসিনো অবৈধ, অর্থাৎ ক্যাসিনোকে লাইসেন্সই দেওয়া যায় না।

তো সেই ক্যাসিনোই যখন রাজধানী ঢাকার বুকে পাওয়া গেল, শুরু হলো তোলপাড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে আলোচনা আর সমালোচনা। আরও অবাক হওয়ার পালা এলো তখন, যখন জানা গেল— এসব ক্যাসিনোর জন্ম নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে এসব ক্যাসিনো। এই শহরের মানুষ, আমাদের চারপাশের মানুষেরাই সেইসব ক্যাসিনোর ব্যবহারকারী।

ক্যাসিনোর বোর্ড (ছবি- সংগৃহীত)

এই ক্যাসিনো আসলে কী? উইকিপিডিয়া বলছে, ক্যাসিনো আসলে এমন একটি জায়গা যেখানে জুয়া খেলার সুব্যবস্থা থাকে। সাধারণত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, পর্যটকবাহী জাহাজ ও পর্যটনকেন্দ্রিক এলাকায় ক্যাসিনোর দেখা মেলে। সেখানে জুয়া খেলার পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ধরনের মদ কেনা ও পানের সুযোগও।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যখন ঢাকার বুকে ক্যাসিনো ‘আবিষ্কার হলো, তখন সেখানে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার ও সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নানা রকমের সংকট-সমস্যা থাকলেও ক্যাসিনো ধরা পড়ার পর থেকে নেটিজেনদের মূল আলোচনার বিষয় এখন সেটিই।

বেসরকারি টেলিভিশেন চ্যানেল জিটিভি ও সারাবাংলা ডটনেটের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ফেসবুকে লিখেছেন তারা মাত্র কিছুদিন আগেই ঢাকায় ক্যাসিনোর রমরমা বাণিজ্যের কথা জানতে পেরেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘মাত্র কিছুদিন আগে পুলিশের সূত্রে আমি ঢাকার কয়েকটি ক্যাসিনোর কথা শুনতে পাই। কয়েকজন রিপোর্টারের সাথে আলাপ করি। রিপোর্টার জমশেদ নাজিম বলে, ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে পারব না। খুব বড় সন্ত্রাসীরা এগুলো চালায়… ক্ষমতার কেন্দ্রে এদের বসবাস। পরে সিদ্ধান্ত নেই, জুয়াড়ি হিসেবেই একজনকে পাঠানো হবে বনানীর এক ক্যাসিনোতে। তার আগেই কাল অভিযান হয়ে গেল…।’

বিজ্ঞাপন

আরেক সাংবাদিক দৈনিক প্রথম আলোর সংস্কৃতি ও বিনোদন বিভাগের প্রধান জাহীদ রেজা নূর লিখেছেন, ‘ক্যাসিনো আসলে কাল দিনদুপুরে আকাশ থেকে পড়েছে। তাই কেউ আগে সেটা দেখতে পায়নি। এখানে মতলববাজ খুঁজতে যেও না। বরং নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।’

সাধারণ মানুষও ক্যাসিনো নিয়ে নানা মত দিচ্ছেন। এদের কেউ কেউ অবাক হয়েছেন, কেউ বিস্মিত হয়েছেন। এতদিন পরে কেন বিষয়টি প্রকাশ্যে এলো, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। অনেকেই আবার ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনোগুলো অবাধে কীভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বা কারা সহযোগিতা করছে, তাদের পরিচয় প্রকাশের দাবিও উঠছে।

বাবু আহমেদ নামে একজন অনেকটা স্যাটায়ার করে লিখেছেন, ‘আগে ক্যাসিনো কৈলেই লাস ভেগাস মাথায় আসত। লাল-নীল বাত্তি-পানি, হেনতেন-হাবিজাবি দ্যাখতাম কল্পনায়। এখন ফকিরাপুলের প্রিন্ট পাড়া মাথায় আইতেছে!’

প্রবাসী স্বপন আহমেদ লিখেছেন, “‘ক্যাসিনো রয়েল ইন ফকিরাপুল’ সিনেমার লিংকটা কেউ দিতে পারবেন?”

সব মিলিয়ে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সরগরম সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তেমনি ক্যাসিনো নিয়ে নানা ধরনের খবর প্রকাশ করছে দেশের গণমাধ্যমগুলো। পিছিয়ে নেই ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেলগুলোও।

গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাতে ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এগুলো সিলগালা করে দেওয়ার পাশাপাশি মোট ১৮২ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এসব জায়গা থেকে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা, জাল নোট, জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ইয়াবা ও দেশি-বিদেশি মদ।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের প্রবেশ পথ (ছবি- সংগৃহীত)

সিলগালা হওয়া ক্যাসিনোগুলো হলো— রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ং মেনস ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র, বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ও মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব।

যে কয়টি ক্যাসিনো সিলগালা করা হয়েছে, সেগুলো চলছিল মূলত বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের আড়ালে। যারা অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা ব্যবসা করেন। র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, এদের কারোরই মদপানের লাইসেন্স নেই। তবে ওইসব ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা ও মদপানের সময় তারা গ্রেফতার হন।

আরও জানা গেছে যে, এসব ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী আনা হয়েছিল। বিশেষ করে নেপাল, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আনা কর্মীরা এসব ক্যাসিনোর জুয়ার বোর্ডসহ অন্যান্য কাজ পরিচালনা করতেন। র‌্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন বিভিন্ন তথ্য।

ছবি: ইয়ং মেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব থেকে তুলেছেন সুমিত আহমেদ

ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড ঢাকায় ক্যাসিনো দেশি-বিদেশি মদ র‌্যাবের অভিযান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর