Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানানোর চক্রে ‘ট্রাভেল এজেন্সি-জনপ্রতিনিধি’


১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পরিচয় গোপন করে চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে একটি ‘শক্তিশালী চক্রের’ জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে। এই চক্রে চট্টগ্রামের তিনটি ট্রাভেল এজেন্সি, পাসপোর্ট অফিস এবং বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির অফিসের কর্মীরা আছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ ও মনসুরাবাদে দু’টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। প্রাথমিক অনুসন্ধানের সময় দুদক টিম দুটি কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিস থেকে থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে প্রায় ১৫০ জনের পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য জব্দ করে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন চেয়ে দুদকের চট্টগ্রামের এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে চিঠি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের-২ সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাবার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অনুসন্ধান আমরা সম্পন্ন করেছি। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমরা খুব শিগগিরই আমরা ঢাকায় কমিশনে পাঠাব। সেখানে বিস্তারিত অনুসন্ধানের অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি পেলে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করব।’

চট্টগ্রামের দু’টি পাসপোর্ট অফিসের মধ্যে একটি নগরীর মনসুরাবাদে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস। এর অধীনে হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন। এছাড়া মহানগরীর ডবলমুরিং, বন্দর, পতেঙ্গা, বায়েজিদ বোস্তামী, পাহাড়তলী, হালিশহর ও আকবর শাহ থানা এ কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী উপজেলা এবং নগরীর কোতোয়ালী, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ ও কর্ণফুলী থানা এলাকার লোকজন আবেদন করতে পারেন।

চট্টগ্রাম পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে গত এপ্রিল থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ২৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়। একই সময়ে মনসুরাবাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস থেকেও ৫০ জনের মতো রোহিঙ্গা আটক করে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, বেশ কয়েকজনকে আটকের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে নেমে ১৫০টির মতো পাসপোর্টের আবেদন জব্দ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর মনসুরাবাদের আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের ৫টি, পাঁচলাইশে একই অফিস থেকে ৭৪টি, নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ২টি এবং কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের ১৮ থেকে ২০টি আছে। কক্সবাজার থেকে আরও ৩০টি পাসপোর্টের আবেদন কয়েকদিনের মধ্যে দুদকের হাতে পৌঁছাবে।

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের-২ উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্টের আবেদনগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। দেখা যাচ্ছে তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে নেওয়া জন্মসনদ, নাগরিকত্বের সনদসহ প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছেন। এখন সনদগুলো সঠিক কিনা, জনপ্রতিনিধিরা সেগুলো সরবরাহ করেছেন কিনা, আবেদনকারী আদৌ বাংলাদেশি নাগরিক কিনা সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখব।’

দুদকের কাছে থাকা কয়েকটি সন্দেহজনক পাসপোর্টের আবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মে শামসুল আলম নামে এক ব্যক্তি নগরীর পাঁচলাইশের কার্যালয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া জন্মসনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিয়েছেন। জন্ম সনদে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন ও নিবন্ধক মো. জহির উদ্দিনের সিল-স্বাক্ষর আছে। তবে পাসপোর্টের আবেদনে নাম ‘শামসুল আলম’ থাকলেও জন্মসনদে উল্লেখ আছে ‘সামশুল আলম’। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তাকে সরাসরি রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে সন্দেহ করছেন।

চলতি বছরের ২২ জুলাই ফাহাদ ইসলাম নামে এক ব্যক্তি পাঁচলাইশের কার্যালয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে নেওয়া জন্মসনদ সংযুক্ত করেছেন। এতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলমের সিল-স্বাক্ষর আছে। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরের স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদও জমা দিয়েছেন। কিন্তু এই আবেদনকারীকে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করেছেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা।

একই অফিসে পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জমা দিয়েছেন জান্নাত আরা নামে এক নারী। তার এনআইডি নম্বর- ১৯৯৭১৫২৬১০৮০০০/০৫। এই এনআইডি নম্বর নিয়ে সন্দেহ আছে দুদক ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সাইদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জন্মসনদ বা এনআইডির নম্বর দিয়ে আমরা শুধু ডাটাবেইজে যাচাই করতে পারি। এর বেশি যাচাইবাছাই সেটা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে হয়ে আসে। এখন জালিয়াতির মাধ্যমে যদি কেউ সনদ দাখিল করে, সেটা আমাদের পক্ষে বের করা সহজ নয়।’

দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা জেনেছি, জনপ্রতিনিধিদের সিল-স্বাক্ষরে যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, অনেকক্ষেত্রে সেগুলো জাল। আবার জনপ্রতিনিধিদের অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে এমনও আছে। এক্ষেত্রে পাঁচলাইশের পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের তিনটি ট্রাভেল এজেন্সির নাম আমরা পেয়েছি, যারা ভুয়া সনদ তৈরি করে জমা দিয়ে পাসপোর্ট পাইয়ে দিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের। তাদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস এবং অনেক জনপ্রতিনিধির অফিসের যোগসাজশ আছে। এটা একটা শক্তিশালী দালালচক্র। বিস্তারিত অনুসন্ধানের অনুমোদন পেলে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।’

দুদক পাসপোর্ট রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

ফের দাপট দেখালেন সাকিব
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪

আরো

সম্পর্কিত খবর