চট্টগ্রাম ব্যুরো: রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ার মামলায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মচারী জয়নাল আবেদিন। জবানবন্দিতে জয়নাল এই জালিয়াতির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম প্রকাশ করেছেন বলে তদন্তকারী সংস্থা ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেহ মো. নোমানের আদালতে জয়নাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় জয়নাল। তিনদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জয়নালকে আদালতে হাজির করেছিলেন এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। তবে জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্য নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কোনো কর্মকর্তা।
সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জয়নাল আবেদিন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পেয়েছি, জবানবন্দিতেও সেসব তথ্য জয়নাল প্রকাশ করেছে।’
তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে এবং জবানবন্দিতে অনেক তথ্য এসেছে। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। আমরা জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য পেয়ে বেশ কয়েকজনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি।’
আদালত এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জয়নাল যে সিন্ডিকেটের হয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি ও এনআইডি পাইয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন, সেই সিন্ডিকেটের সবার নাম জবানবন্দিতে প্রকাশ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা, স্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী, অতীতে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন এমন কয়েকজনের নাম আছে। যারা রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়ার জন্য সার্ভারে ঢুকে কাজ করেছে এবং যারা জয়নালকে দিয়ে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে সার্ভারে ইনপুট দেওয়ার আগপর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের নামও জয়নাল প্রকাশ করেছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জয়নালকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতিতে যুক্ত একাধিক ব্যক্তিকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। কয়েকজন নাগালের মধ্যেও আছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। বাকি দু’জন হল- জয়নালের বন্ধু বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া। জয়নালের হেফাজতে থাকা নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়, যেটি বিজয় ও সীমার কাছে রেখেছিলেন জয়নাল। রাতেই ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় জয়নালকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে মোস্তফা ফারুক নামে নির্বাচন কমিশনের আরেকজন অস্থায়ী কর্মচারীকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তার কাছ থেকেও নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। মোস্তফা ফারুককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী সংস্থা।