পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে বিএনপি
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৫৬
ঢাকা: নানা ‘অনিয়ম’ ও ‘অপকর্মের’ অভিযোগে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ‘হঠাৎ’ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে দেশের রাজনীতিতে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। নিজ দলের অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকারের এই অভিযান দেশের সার্বিক রাজনীতির ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটি বোঝার চেষ্টা করছে দলটি।
এক সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ, ঢাকা মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা, আদলতে সোপর্দ— এ বিষয়গুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে গত তিন দশকের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, তাদের প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, গ্রেফতার, মালামাল জব্দ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা খুব একটা ঘটেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে বিএনপি নেতারা সরকারের এই ‘হঠাৎ শুদ্ধি’ অভিযান নিয়ে গতানুগতিক বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত। দলটির অনেকেই মনে করছেন, নিজ দলের কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অভিযান শুরু করলেও ক্ষমতাসীনরা এর সমাপ্তি টানতে পারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে। কেউ কেউ আবার এই ঘটনার মধ্যে ওয়ান/ইলেভেনের সাদৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকবে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত সরকার বিষয়টিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা দেখার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’
বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগে বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান আত্মরক্ষার জন্যই চালাচ্ছে সরকার। এটা করা ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না। এ কাজটির জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রশংসিত হতে পারেন। তবে কাজটির মধ্যে কিছু পদ্ধতিগত ভুল আছে।’
‘চাঁবাজির দায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে মুখের কথায় প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করতে পারেন না। একটা জরুরি কাউন্সিল ডেকে ছাত্রদের দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যেত। যেভাবে তাদেরকে সরানো হয়েছে, সেটা অগণতান্ত্রিক। আর যুবলীগের সভাপতি প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অপসারণ করতে পারেন না। সে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা করে অপরাধ করেছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে সাংগঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল’— বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের এই অভিযানকে ‘ইমেজ রিগেইন’ ফ্যাক্ট হিসেবে দেখছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত সততা এবং দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সত্বেও দলের দুষ্টু লোকদের কারণে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ইমেজ সংকটে পড়েছে। সেই ইমেজ রিগেইন করার জন্যই নিজদলের বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে দল এবং নিজের ইমেজ রিগেইন করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু এতে শেষ রক্ষা হবে কী না, সেটা বলা মুশকিল। কারণ, সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গুটিকয়েক সুবিধাভোগী ছাড়া সাধারণ মানুষ আর আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না।’