Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শারদ উৎসবের আমেজ, অপেক্ষা দেবী বরণের


২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৭

ঢাকা: ছোট-বড় অসংখ্য কাঠ, বিশেষ ধরনের বাঁশ ও রশি দিয়ে তৈরি হচ্ছে মূল মঞ্চ। এরপর তাতে রঙ-বেরঙের কাপড় মুড়িয়ে বসানো হবে উন্নতমানের এলইডি বাতি। ত্রিশ ফুট উচ্চতায় হবে দুটি প্রবেশ গেট। গেটের উপরে থাকবে সাদা কর্কশিটে তৈরি মা দুর্গার বিশাল প্রতিকৃতি। আর পদ্মপুকুরের ঠিক মাঝ বরাবর বসানো হবে শিবের মূর্তি। পূজামণ্ডপের প্রতিটি কারুকার্যে এবার বসবে আলোর ঝলকানি। সঙ্গে থাকবে সাউন্ড সিস্টেম। মন্দিরে প্রবেশ করেই যেন দর্শনাথীরা পান স্বর্গের ছোঁয়া। এমন পরিকল্পনা নিয়েই শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরে।

বিজ্ঞাপন

রমনা কালী মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সমীর গোলদার জানান, এবার গোটা পূজামণ্ডপে থাকবে প্রযুক্তির ছোঁয়া। সেজন্য অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দশ লাখ টাকা বেশি বাজেট রাখা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজার সন্ধ্যায় থাকবে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে পূজা উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রমনা কালী মন্দিরের পাশাপাশি রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকেশ্বরী, শাখারীবাজার, তাঁতীবাজার ঘুরেও মণ্ডপগুলোতে এমন কর্মব্যস্ত পরিবেশই দেখা গেছে। দম ফেলার অবস্থা নেই কারিগরদের। কেউ ব্যস্ত প্রতিমা গড়ায়, কেউ মণ্ডপ, কেউবা গেট তৈরির কাজে। নিজ নিজ মণ্ডপ সাজাতে সৃষ্টিশীলতার কমতি রাখছেন না কেউই। ঘরে ঘরে চলছে দেবী দুর্গাকে বরণের আয়োজন। চারদিকের এই আয়োজনই বলে দিচ্ছে- দেবী দুর্গা আসছেন।

পঞ্জিকা মতে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (১১ আশ্বিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ) রাত ১১ টা ৫৬ মিনিটে মহালয়ার মধ্য দিয়ে শক্তির দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো হবে। তিথি অনুযায়ী এবার দুর্গার আগমন ঘটবে ঘোড়ায় চেপে। সাধারণত মহালয়ার সাতদিন পরে শুরু হয় দুর্গাপূজা। ৫ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথির সন্ধ্যা বোধনে দৃষ্টি খুলবেন দেবী দুর্গা। এরপর থেকে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ৬শ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার বেশি।

পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কান্তি চ্যাটার্জি সারাবাংলাকে জানান, দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরে মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজা একরকম শুরু হয়ে যাবে। এরপরের সাতদিনে মূলত মণ্ডপ সাজানো আর খুঁটিনাটি কাজ থাকে। বরাবরের মতো এবারও পূজাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আশ্বস্ত করেছে, সবধরনের নিরাপত্তা এ সময়ে তারা দেবেন। শুধু ঢাকা নয়, দেশের সর্বত্রই পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

বিজ্ঞাপন

পূজামণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মণ্ডপের আয়োজকরা চেষ্টা করেছেন কোনো একটি থিম উপস্থাপনের। পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার ও তাঁতীবাজার মিলিয়ে ৫০টির বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে। এখানকার অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন থিমে মা দুর্গাকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। যেমন: বর্তমানে মানুষের বন্ধন কমে যাচ্ছে- সে চিন্তা থেকে এবার মণ্ডপের থিম উপস্থান করা হয়েছে ‘বুনন গাঁথা’। আবার কেউ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান বোঝাতে গিয়ে থিম রেখেছেন ‘মুক্তি’, ‘প্রগতি’, ‘শান্তী’, ‘মায়া’, ‘শক্তি’, ‘মা’ ইত্যাদি। এই থিমগুলো দিয়েই এবার মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। আবার কেউ সাদামাটা প্রতিমা গড়েছেন- যেখানে একজন সাধারণ মায়ের সঙ্গে দেবী দুর্গাকে তুলনা করা হয়েছে।

প্রতিমা যে রঙ কিংবা থিমেই তৈরি হোক না কেন, বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে সব বিপদ থেকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। তাই শক্তির দেবী দুর্গাকে আড়ম্বরে বরণ করতে বছর জুড়ে থাকে এই অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে। আর দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চেপেই বিদায় নেবেন দশমী তিথিতে।

দেবী দুর্গা পূজামণ্ডপ শারদ শারদ উৎসব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর