নিজের নির্ধারণ করা ভাড়া লঙ্ঘন বিআরটিসির
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:০০
ঢাকা: দেশের অন্য কোনো পরিবহন কোম্পানির এসি বাসের ভাড়া নির্ধারিত না হলেও সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি এ বছর তাদের ভাড়া নির্ধারণ করে। বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় নতুন বাস আসার ঠিক আগেই একটি কমিটি করে এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে নিজেদের নির্ধারণ করা ভাড়াই মানছে না বিআরটিসি। সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়ার কাছ থেকে ইজারা নেওয়া বাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়ায় চলছে। সরেজমিনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার ঘটনা দেখা গেছে।
বিআরটিসির নির্ধারণ করা এসি বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৩ টাকা ২৫ পয়সা। বিআরটিসির ‘আইকনিক রুট’ হিসেবে পরিচিত মতিঝিল-উত্তরার এসি বাসে ভাড়ার এ হার মানা হয়নি। সদ্য চালু হওয়া উত্তরা থেকে কুড়িল বাড্ডা হয়ে মতিঝিল রুটেও এই ভাড়ার হার মানা হচ্ছে না। এসব বাসের ভাড়া তোলে বহিরাগত সিন্ডিকেটের লোকেরা। তাদের হাত থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে বিআরটিসির বাস টিকিট।
কুড়িল-বাড্ডা রুটের যাত্রীদের অভিযোগ কিলোমিটার প্রতি এসি বাসের যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে তার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চালুর প্রথম মাসে প্রগতি সরণী সড়কের বসুন্ধরা গেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাত্র ১১ কিলোমিটারে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। আবার উত্তরা থেকে মতিঝিল ৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিআরটিসির লোগোসহ এই দুই দামের টিকিট কেটে যাত্রীরা বাসে উঠেন। এক্ষেত্রে বিমানবন্দর মোড় বা খিলক্ষেত থেকে উঠলেও দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। আবার নতুন বাজার বা রামপুরা থেকে উঠলে কুড়িল থেকে আসার বাস ভাড়া কাটা হয়।
বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতি কিলোমিটারে এসি বাসের ভাড়া ৩ টাকা ২৫ পয়সা। এর অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে সে টাকা বিআরটিসি পাবে না। অন্যরা এই টাকা নিচ্ছে।
বিআরটিসির এসি বাস ভাড়া অনুযায়ী, প্রগতি সরণী বসুন্ধরা গেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাত্র ১১ কিলোমিটারে এসি বাস ভাড়া আসে ৩৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সেখান প্রতি টিকিটে ১৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার উত্তরা থেকে মতিঝিল বাড্ডা হয়ে ২০ কিলোমিটারে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া আসে ৬৫ টাকা। সেখান যাত্রী প্রতি ৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বাড্ডা ও নতুন বাজার থেকে প্রচুর যাত্রী ওঠেন মতিঝিলের উদ্দেশ্যে। ৬ কিলোমিটার দূরত্বে এখানেও ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয় যা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ।
বাড্ডা রুটে বিআরটিসির লোগোসহ টিকিট বিক্রেতাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা নিজেদের বহিরাগত বলেই জানান। মাসিক বেতনে অন্য আরেকজনের নিয়োগে কাজ করছেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ রুটে বিআরটিসির মৌখিক লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন খিলক্ষেত ছাত্রলীগের এক নেতা। সাদিকুর রহমান শিপু নামে এই নেতা জোয়ারসাহারা ডিপো থেকে ১২ টি এসি বাস এ রুটে নামিয়েছেন।
ডিপো সূত্র জানায়, উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া আসা মিলিয়ে একটি ট্রিপ হয়। ট্রিপ প্রতি ৪ হাজার ২শ টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে। বাসের ৭৫ ভাগ সিটের ভাড়া হিসেবে করে এই রাজস্ব ধরা হয়েছে। বাস্তবে বাসের প্রতিটি সিট ভর্তি যাত্রী দেখা যায়। এমনকি সিট না পেয়ে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা যায়। সে হিসেবে দিনে প্রতি ট্রিপ থেকে কয়েক হাজার টাকা অতিরিক্ত মুনাফা বিআরটিসির বহিরাগত লোকদের হাতে চলে যাচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজার মশিউর জামান বলেন, এসি বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৩ টাকা ২৫ পয়সা ঠিক আছে। তবে বেশি নেওয়া হচ্ছে না। তিনটি স্লট করা হয়েছে। এই স্লটে নেওয়া হচ্ছে। এখন ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে উঠলে সে অনুসারে হয়ত ভাড়া মিলবে না।
বিষয়টি বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যান এহছানে এলাহীর নজরে আনলে তিনি বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে তিনি অ্যাকশনে যাবেন জানিয়ে বলেন, ‘বিআরটিসির কোনো বাসে কোনো রুটে অতিরিক্ত এক টাকাও নেওয়া হবে না।’