Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ‘ইসিপাড়ায়’ গ্রেফতার আতঙ্ক


২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:২৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন অফিসে ‘গ্রেফতার আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। এ সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার নির্বাচন অফিসের কর্মচারী জয়নাল আবেদিনের জবানবন্দি দেওয়ার পর এ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। জবানবন্দিতে জয়নাল রোহিঙ্গাদের এনআইডি কেলেঙ্কারিতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার তথ্য ফাঁস করেছে বলে আলোচনা এখন নির্বাচন অফিসের কর্মীদের মুখে মুখে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি: ইসির ৪ কর্মী পুলিশ হেফাজতে

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর লাভ লেইনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজন অস্থায়ী কর্মচারীকে নিয়ে যায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আতঙ্ক আরও জোরালো হয়েছে। একই অবস্থা উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কার্যালয়গুলোতেও বলে জানা গেছে।

চারজন অস্থায়ী কর্মচারীকে নেওয়ার পর আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশনের দোতলায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা কর্মস্থলে আছেন, তাদের প্রায় সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। উচ্চমান সহকারী পদের একজন সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, জবানবন্দিতে জয়নাল কার কার নাম বলেছেন।

দোতলায় নিজের অফিসকক্ষে একা বসে ছিলেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জয়নাল আবেদিনের জবানবন্দির প্রসঙ্গ আসে।

মুনীর হোসাইন বলেন, ‘গ্রুপিং ছিল। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছেও আসতো। মনে হচ্ছে, সেই বিরোধ থেকে একজন আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।’

নির্বাচন অফিসের পদস্থ কর্মকর্তাদের থেকেও কমচার্রীদের মধ্যে দুশ্চিন্তার ছাপ বেশি দেখা গেছে। তবে সবাইকে নিজেদের দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যস্ত হতেও দেখা গেছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারের পর তিনদিনের রিমান্ড শেষে জয়নাল আবেদিন শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আদালতে জবানবন্দি দেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জয়নাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন অফিসের অনেক পদস্থ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী পর্যায়ের অনেকে এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে তথ্য দিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জয়নালকে জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনব না।’

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া চারজন হলেন- শাহীন, জাহিদ, ফাহমিদা নাসরিন ও পাভেল বড়ুয়া।

এদের মধ্যে শাহীন ও ফাহমিদা কোতোয়ালী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, পাভেল ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জাহিদ বন্দর থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে অস্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন।

এদিকে জয়নালকে জিজ্ঞাসবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা নির্বাচন অফিসের আরেক কর্মচারী মো. মোস্তফা ফারুককেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধের তথ্য দিয়েছেন। গ্রেফতার জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ আছে। এর বিরোধী একটি পক্ষও আছে। মোস্তফা জয়নালের বিরোধী। দু’পক্ষই রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা আরও জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের একজন কর্মকর্তা চট্টগ্রামের কর্মরত থাকাকালে মোস্তফার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি মোস্তফাকে দিয়ে সব কাজ করাতেন। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন আরেকজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (বর্তমানে চট্টগ্রামের বাইরে একটি জেলার দায়িত্বে) এবং তার ঘনিষ্ঠ জয়নাল আবেদিনরা। মোস্তফার দাবি, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়টি চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় ওই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানতেন।

মোস্তফা আরও তথ্য দিয়েছেন, তিনি রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য আনুষাঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করতেন। নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষরসম্বলিত ফরমে তথ্য লিপিবদ্ধ করতেন। সেই তথ্য পাঠাতেন ঢাকায় সত্যসুন্দর নামে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাছে। সত্যসুন্দর সার্ভারে আপলোড দিয়ে এনআইডি প্রিন্ট করে কুরিয়ারে অথবা পিডিএফ ফাইল করে মেইলে পাঠাতেন। তারপর রোহিঙ্গাদের কাছে সরবরাহ করা হতো।

তবুও থেমে নেই রোহিঙ্গাদের ভোটার হওযার প্রবণতা

গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার মধ্যম হালিশহরের নিশ্চিন্তাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার হতে এসে ধরা পড়ে আট জন রোহিঙ্গা। স্কুলটিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলছিল। হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত কর্মীরা তাদের ধরে বন্দর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন।

গ্রেফতার আট জন হলেন- মো. ইসমাইল (২৬), মো. ওসমান (২০), কবির আহাম্মদ (৫৫), মো. আব্দুল মজিদ (২৫), মো. সৈয়দ (৫০), আনোয়ারা বেগম (৩৫), জুলেখা বেগম (৩৫) ও শাহানা বেগম (২৮)।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেকের কাছে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ এবং তাদের মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। চারটি জাতীয় পরিচয়পত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছি। রোহিঙ্গাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এত কিছু হয়ে যাচ্ছে, তবুও রোহিঙ্গারা ভোটার হতে আসছে। কিভাবে রোহিঙ্গাদের ঠেকাব, এটা একটা সমস্যা হয়ে গেছে। এত মানুষ আসে, কাকে কিভাবে শনাক্ত করব যে সে রোহিঙ্গা।’

আতঙ্ক ইসি গ্রেফতার চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর