ছোট ও আধুনিক কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবন করুন: কৃষিমন্ত্রী
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:০০
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ছোট ও কৃষকের ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আমাদের জমি কম। অনেক সময় বড় যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না। তাই কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষকের কথা মাথায় রেখে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্লিম, স্মার্ট ও ইফেকটিভ যন্ত্রপতি উদ্ভাবন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ধানের কিছু জাত আছে যেগুলো নুইয়ে পড়ে। এ ধরণের ধান কাটার কোন যন্ত্র আমাদের নেই। হেলে বা নুইয়ে পড়া ধান কাটার যন্ত্রপাতি আমদানি বা উদ্ভাবন করতে হবে।
শনিবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী ‘জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা ২০১৮’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।
‘কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে, অর্থ-শ্রম-সময় বাঁচবে’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে সোমবার। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় সরকারি-বেসরকারি ২১ টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দিন দিন আমাদের কৃষিতে কায়িক শ্রম দেয়ার শ্রমিকের অভাব দেখা দিচ্ছে। যার ফলে কৃষিতে উৎপাদন ও সময় বেশি লাগছে। আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কৃষক আগে অনেকটা বাধ্য হয়ে কৃষিকাজ করতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এজন্য কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কায়িক শ্রম ও খরচ কমছে। সময় বেঁচে যাচ্ছে। কৃষিকে এখন নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার হাওর ও এক ফসলী এলাকায় শতকরা ৭০ ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় শতকরা ৫০ উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। এতে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনেকের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। দেশের উন্নয়নের সাথে সঙ্গে কৃষি শ্রমিকরা দিন দিন অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। যার ফলে কৃষিকাজে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখতে হলে বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যবহারে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। এতে আমার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ১ লাখ ৭৫ হাজার সমবায় সমিতিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মোহাম্মদ নজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল আলম। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর। এর আগে সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যলী অনুষ্ঠিত হয়। পরে এই সেমিনার শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন অতিথিরা।
মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আর বাহারী যন্ত্রপাতির পসরা বসেছে। কী নেই! আলু উত্তোলন, ভুট্টা মাড়াইকল, রিপার, পাওয়ার টিলার, থ্রেসার, কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ খুচরা যন্ত্রাংশও চোখে পড়েছে। ছোট উদ্যোক্তারা এসেছেন বগুড়া ও সিলেট থেকেও।
এসিআই মোটরসের স্টলে জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল কাটা এবং সেই ফসল মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হওয়া প্রায় সব যন্ত্রপাতিই প্রদর্শিত হচ্ছে। সর্বশেষ প্রযুক্তি হিসেবে মেলায় তারা নিয়ে এসেছে ইয়ামাহার ব্র্যান্ডের রাইস ট্রান্সপেল্টার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার। মাত্র দুদিন আগে দেশে প্রবেশ করা সর্বশেষ প্রযুক্তির এসব যন্ত্র এখনও বাজারজাত শুরু হয়নি। এসআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটি গত বছরে সাড়ে তিনশ’ কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিক্রি করেছে। সরকারি টেন্ডারসহ এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। প্রতিনিয়তই এসব যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মেটাল এগ্রিটেক লিমিটেডের স্টলে ‘মেটাল চপার’ নামের একটি যন্ত্র চোখে পড়েছে। যন্ত্রটি দিয়ে শুধুমাত্র ঘাষ কাটা হয় এবং এর ব্যবহার ডেইরি ফার্মে। দাম প্রায় ১৪ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির এজিম অ্যান্ড হেড (মার্কেটিং ও সেলস) জহুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরাই এই যন্ত্রটি তৈরি করছি। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে এই যন্ত্রটি নেই। এই যন্ত্রটিই আমাদের স্টলের ব্যতিক্রম। এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা সর্বশেষ প্রযুক্তির কম্বাইন্ড হারভেস্টার রয়েছ, যার দাম ১৮ লাখ টাকা।
সামগ্রিকাভাবে কৃষি যন্ত্রপাতির নতুন এই খাতের সমস্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি আলিম এহসান চৌধুরি সারাবাংলাকে বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানিকৃত যন্ত্রের উপর উন্নয়ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এটি দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সমস্যা। তাই স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত টেকসই প্রযুক্তিকে উন্নয়ন সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতির এ খাতটিকে এখনও কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এতে প্রতিনিয়তই আমাদের নানা ধরণের বিড়ম্বণায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত এই খাতটিকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। বেড়ে উঠা শিল্প হিসেবে খাতটিকে কর ও ভ্যাটের আওতামুক্ত করার দাবিও রয়েছে তাদের।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসআই/এনএস