ভেঙে যাচ্ছে পরমাণু বিজ্ঞানীদের সংগঠন!
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:১২
ঢাকা: বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘ (বায়েসা)’ ভেঙে যাচ্ছে! সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দেওয়ায় কমিশনের সাধারণ বিজ্ঞানীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টি সমাধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হককে অবহিত করলেও কোনো ফল মেলেনি।
জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘ’ (বায়েসা) ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই গঠিত হয়। এই সংগঠনের দিক-নির্দেশিকা ও রক্ষাকবচ হচ্ছে বায়েসা গঠনতন্ত্র। বর্তমানে সংগঠনটিতে প্রায় ছয় শতাধিক সদস্য রয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, প্রফেসর ড. নঈম চৌধুরী, ড. আব্দুর রব মোল্লাসহ দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই এই সংগঠনটিতে নির্বাচন নিয়ে নানা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী, বিদায়ী কর্মপরিষদের এক সভায় ড. এ টি এম ফয়েজুল ইসলামকে নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করার পর তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে বায়েসা নির্বাচন-২০১৯-এর তফসিল ঘোষণা করেন। অন্যদিকে একই সংগঠনের নামে বিজ্ঞানীদের আরেকটি অংশ বায়েসার গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ড. মো নুরুল ইসলামকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখে আরও একটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে। দু’টি নির্বাচনেই পদ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৩টি।
এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, একই সংগঠনের নামে দু’টি পক্ষ কিভাবে নির্বাচন করবে? বিজ্ঞানীরা দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় কমিশনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে কমিশনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এরকম মতভেদ চলতে থাকলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
এ বিষয়ে এক পক্ষের নির্বাচন কমিশনার ড. নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাই সম্মত হয়ে আমাকে কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়েছে। আমি এর বাইরে কিছুই বলতে চাই না।’
আরেক পক্ষের নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম ফয়েজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী কর্মপরিষদ আমাকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি গঠনতন্ত্রের বিধান ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া এক পক্ষের সভাপতি ড. সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়েসা কমিশনের বিজ্ঞানীদের প্রাণের সংগঠন। আমরা কখনও এই সংগঠনটিকে নষ্ট হতে দিতে পারি না। কিন্তু একটি পক্ষ এই সংগঠনটিকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সংগঠনটিকে বাঁচাতে যেকোনো বৈধ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাব।‘
গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া বিদ্রোহী পক্ষের সভাপতি পদপ্রার্থী ড. আসাদুজ্জামানকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়েসার সাবেক এক সভাপতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরমাণু বিজ্ঞানীদের ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি এভাবে বিরোধে জড়াবে, সেটা কল্পনাও করতে পারি না। এই মুহূর্তে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কেননা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন একটি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এখানে খারাপ কিছু হলে তার প্রভাব অনেক দূর গড়াবে।
এ বিষয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বায়েসার সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না বা মন্তব্য করতে চাই না।’
তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেটা কাম্য নয়। বিষয়টি সমাধানে আমি জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই নিবার্চন নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হতে দেবো না।’
পরমাণু শক্তি কমিশন পাল্টাপাল্টি নির্বাচন ঘোষণা বায়েসা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘ